
দেশের দীর্ঘদিনের আলোচিত বিষয়গুলোর একটি নির্বাচন ব্যবস্থা। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলাই বিগত কয়েক বছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও সংশ্লিষ্টরা নিঃসন্দেহে উত্তীর্ণ হয়েছেন সদ্য সমাপ্ত বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে। বৃহস্পতিবার সব শঙ্কা কাটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের ভোটে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটেছে। সম্পূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে, সবার অংশগ্রহণে নির্বাচিত হয়েছেন আগামীর নগর অধিপতি। এটি এ মুহূর্তে দেশের জন্য একটি অত্যন্ত ইতিবাচক ঘটনা।
বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন বিরাট ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে হারিয়ে। নির্বাচন ব্যবস্থার অতীত ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কোনো রকম সহিংসতা এবং কারচুপির অভিযোগ ছাড়াই এ নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি মডেল নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভোটের দিন গাজীপুরে যেন ফিরে এসেছিল দেশের নির্বাচনের পুরোনো এক চেহারা। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন ৩৩৩ প্রার্থী। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভোট প্রদানে উৎসাহীদের দেখা গেছে লাইনে দাঁড়াতে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সব কেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে চলেছে ভোট গ্রহণ। এমনও ঘটেছে যে, ভোটারদের লাইন শেষ না হওয়ায় কিছু কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের পরও ব্যবস্থা করা হয়েছে ভোট গ্রহণের। নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট প্রদান করেছেন। নির্বাচন মানেই যেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা অবধারিত, সেখানে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে না পারা বিস্ময়কর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তব্য পালনে ছিল সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল। পাশাপাশি কঠোর ছিল নির্বাচন কমিশনও। বলা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুরের অগ্নিপরীক্ষায় সফল ইসি। সরকারের কাছেও চ্যালেঞ্জ ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার। নির্বাচন নিয়ে সব প্রার্থীর সন্তোষ প্রকাশ— দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে একটি বিরল ঘটনা। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হলো, এ নির্বাচনে এটিই ঘটেছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো পাঁচ সিটি নির্বাচনের প্রথম ধাপ। আগামী মাসে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন। সবার প্রত্যাশা অবশিষ্ট সিটি নির্বাচনও ভালোভাবেই সুসম্পন্ন হবে। কারণ সব ঠিক থাকলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের শুরুতেই। সেই নির্বাচন যেন সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়; দেশে নির্বাচন ব্যবস্থায় সেই পরিবেশ তৈরি করা সর্বাগ্রে জরুরি। আমরা জানি, সেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেশি-বিদেশি সব মহলের মনোযোগ এখন সিটি নির্বাচনের ওপর।
আমরা মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্থানীয় পর্যায়ে হলেও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচনের রাজনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। তাই গাজীপুর সিটি নির্বাচন শুধু জায়েদা খাতুনের বিজয় হিসেবে দেখলে তা সংকীর্ণভাবে দেখা হবে। মূলত এ বিজয় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও সংশ্লিষ্টরা যদি সামনের নির্বাচনগুলোতেও একই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সমর্থ হন, তবেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যে জনগণ ও সব মহলের আস্থা অর্জিত হবে; যা দেশের গণতন্ত্র বিকাশে নিশ্চিতভাবেই রাখবে অনন্য ভূমিকা। আমাদের প্রত্যাশা, আগামীতেও সংশ্লিষ্টরা একইভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন। এতে করে জনগণ তার প্রত্যাশিত প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার সুযোগ পাবেন। এ বিবেচনায় গাজীপুরের নির্বাচন দেশের ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।