কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ এএম
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কালবেলার বিশেষ সাক্ষাৎকার

কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ না করা হয়

কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ না করা হয়

মো. ফজলুল হক প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০০৪-১০ পর্যন্ত ছিলেন নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি। কাজ করেছেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএফ) পর্ষদ সদস্য হিসেবে। এ ছাড়া এফবিসিসিআই, সার্কের সিসিআই, আইসিসি বাংলাদেশসহ অন্য ব্যবসায়িক সংগঠনেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বাংলাদেশ সরকার ও নিট পোশাক শিল্পের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সম্মেলন, সেমিনার ও ফোরামে অংশ নিয়েছেন। দেশের বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে প্রবেশ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি

কালবেলা: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে এবং বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের কী বার্তা দেয়?

মো. ফজলুল হক: এই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় বার্তা হলো, কোনো ক্ষমতাই চিরস্থায়ী নয়। আপনি যতই অন্যায়-অবিচার করেন না কেন, এর একটি শেষ রয়েছে। কোনো না কোনো দিন আপনাকে আপনার কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে। এবারের গণঅভ্যুত্থান সেটাই আবার স্মরণ করিয়ে দিল।

দ্বিতীয়ত, এই গণঅভ্যুত্থান আবারও প্রমাণ করল যে, জনগণের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। এই শক্তির সামনে কোনো স্বৈরাচার টিকতে পারে না। জনগণ হয়তো সবসময় ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না, যার ফলে স্বৈরাচার জন্ম নিতে পারে। তবে স্বৈরাচারের শোষণ, অন্যায়-অবিচার একদিন জনগণকে ঠিকই ঐক্যবদ্ধ করে। জনগণ যখন রুখে দাঁড়ায়, তখন কেউই সেই শক্তির সামনে দাঁড়াতে পারে না। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের আবারও সেই বার্তাটি দিয়ে গেল।

কালবেলা: রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি উঠছে। আমাদের ব্যবসা বা শিল্প খাতে কোন সংস্কারের প্রয়োজন?

মো. ফজলুল হক: আমি মনে করি, সমগ্র রাষ্ট্র ব্যবস্থারই সংস্কার প্রয়োজন। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব সেক্টরেই সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রের মেরামত দু-একটি সেক্টরের মেরামত দিয়ে হয় না। রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে সংস্কারের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র মেরামত সাধিত হয়। যেহেতু শিল্প ও ব্যবসা দেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চালিকাশক্তি, তাই এখানে সংস্কারটা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থ খাতের সংস্কারের একটি অংশ করা যেতে পারে এটাকে।

ব্যবসা ও শিল্প খাতের সংস্কারের প্রশ্নে প্রথমেই আসে ব্যবসার ধরন ও সম্পদের মালিকানা প্রসঙ্গ। ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে আর ব্যবসা করতে পারবে কি না, একজনের কাছে সব ব্যবসা-বাণিজ্য পুঞ্জীভূত হতে পারবে কি না—সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি একজন ব্যক্তির হাতে অনেক ব্যবসা রয়েছে। আবার ওই ব্যক্তিই অনেক ব্যাংকের মালিক হয়েছেন। আমি মনে করি, এসব জায়গায় সংস্কার আনা জরুরি।

আর্থিক খাত বা রাজস্ব খাতের সংস্কারের সঙ্গে ব্যবসা খাতের অনেক সংস্কার সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে এর বাইরেও ব্যবসা ও শিল্প খাত নিয়ে আলাদা করে ভাবার রয়েছে এবং নির্দিষ্ট কিছু সংস্কারের দরকার রয়েছে।

কালবেলা: দেশের ব্যবসা ও শিল্প খাত সংস্কারে আপনার পরামর্শ কী?

মো. ফজলুল হক: সংস্কারের কাজটি করবে কমিশন। আমরা শুধু সহযোগিতা করতে পারি। ব্যবসা-বাণিজ্যের সংগঠনের নেতারা অনেক সময় রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে যায়। এর ফলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষা হয় না। এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে কমিশন সংস্কারের পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে।

কালবেলা: দেশের শিল্পকারখানাগুলোয় এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। অনেক কারখানা বন্ধ রয়েছে, শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। সব মিলে কী পরিস্থিতি দেখছেন?

মো. ফজলুল হক: বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পকারখানাগুলোয় অস্থিরতা নতুন কোনো বিষয় নয়। ৫ আগস্টের পর থেকে বিষয়টি আরেকটু অগোছানো হয়েছে। সরকার এখনো সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এর কারণ, দেশের পুলিশ প্রশাসন এখনো অনেকটা অগোছালো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকে এখনো কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত বা পালাতক। যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের ওপরও হয়তো সরকারের কিছুটা আস্থার অভাব রয়েছে। সব মিলে এটা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে সবকিছু কিছুটা এলোমেলো দেখা যাচ্ছে।

নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সবারই রাস্তায় বের হয়ে দাবি প্রকাশ করার একটি প্রবণতা আমরা লক্ষ করছি। গার্মেন্টসে শ্রমিক আন্দোলন নতুন নয়। তবে যে ধরনের দাবি-দাওয়া আমরা আগে কখনো দেখিনি, সে ধরনের দাবি-দাওয়াও গত এক মাসে দেখা যাচ্ছে। এটা অবশ্যই অ্যালার্মিং।

আমরা প্রায় দুই বছর ধরে বলে আসছি, পোশাক খাতের আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা ভালো নয়। যদিও সরকারিভাবে একটি ইনফ্লুয়েটেড তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়েছে। পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার ভালো না মূলত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে। এর ওপর শ্রমিক আন্দোলনের সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেশ অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে গেছে। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন আমরা পাঁচ দিন ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আরও প্রায় ১০ দিন আমরা স্বাভাবিক ইন্টারনেট পাইনি। ফলে এটি আমাদের সামগ্রিক ইমেজকে বেশ ভালোভাবে নাড়া দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থার জায়গায় একটু হলেও প্রশ্নবোধক চিহ্নের জন্ম দিয়েছে।

সরকার পরিবর্তনের পর আমরা সবাই যখন নতুন পথ চলার আশায় ক্রেতাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে এরকম ধারাবাহিক অস্থিরতা আমাদের সামগ্রিক ইমেজের সংকটকে আরো গাঢ় করবে। এরই মধ্যে পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তবে সংকটের পেছনে কারা কলকাঠি নাড়ছে, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতার পেছনে শুধু যে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া, তা আমি মানতে পারছি না। ইন্ডাস্ট্রির একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে আমার কাছে মনে হচ্ছে, এখানে আরও কিছু উপাদান জড়িত রয়েছে। সেই উপাদানগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। শ্রমিকদের যেসব দাবি-দাওয়ার ন্যায্যতা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে সরকার কাজ করতে পারে।

কালবেলা: অনেক কারখানায় লুটপাট এবং আগুন দেওয়া হয়েছে। এমনটা কেন ঘটল এবং এর সমাধান কী?

মো. ফজলুল হক: একটি সুযোগসন্ধানী গ্রুপ সবসময় থাকে। তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হামলা, লুটপাট, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই করে থাকে। একটা রোড অ্যাক্সিডেন্টের জায়গায় দেখা যায় আহতদের বেশিরভাগের পকেটে ফোন বা মানিব্যাগ থাকে না। সুযোগ বুঝে কেউ তা নিয়ে সটকে পড়ে। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীর সব সমাজে কম-বেশি থাকে। যেহেতু আমাদের এখানে এখন একটি বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি কম, তাই এমন সুযোগে ওই সুযোগসন্ধানী গ্রুপের লোকজন লুটপাট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাদের আখের গোছানোর চেষ্টা করছে।

অনেকে হয়তো এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজেদের শত্রুতা বা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। হয়তো কারও সঙ্গে কারও বিরোধ রয়েছে, তিনি এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তার কারখানায় আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন। কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে সমর্থন করা সম্ভব নয়। একজন ব্যক্তি যদি চূড়ান্ত অপরাধীও হন, তবুও তার কারখানা ধ্বংস করার কোনো যুক্তি নেই। কারণ কারখানার মালিক জনগণ এবং রাষ্ট্র। এই কারখানায় অনেক খেটে খাওয়া মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। শিল্পকারখানার ওপর কোনো ধরনের আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে এটাও ঠিক, এত বড় একটি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের পর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পৃথিবীর কোনো দেশে সেটা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে হয়তো সেই প্রত্যাশা থেকে একটু বেশিই হয়েছে। আমরা সচেতন থাকলে এটা হয়তো আরও কমানো যেত। যে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মনে করি, কোনো রাজনৈতিক দলও এটি সমর্থন করেনি। ফলে এই জায়গায় আমাদের সচেতনতা বাড়ানো দরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সজাগ থাকা দরকার, যাতে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

কালবেলা: এই অভ্যুত্থান শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের কী বার্তা দিচ্ছে?

মো. ফজলুল হক: এই অভ্যুত্থান থেকে শিল্পপতিদেরও শিক্ষা নিতে হবে যে, কোনো ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় এবং জনগণের ক্ষমতাই চূড়ান্ত ক্ষমতা। বড় বড় ব্যবসায়ী ও কলকারখানার মালিকদের সমাজের প্রতি নৈতিক দায়বদ্ধতার জায়গা আরও বেশি সমৃদ্ধ করা দরকার। তাদের মনে রাখতে হবে, টাকা উপার্জনই জীবনের শেষ কথা নয়। এটাই একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। ব্যবসার পাশাপাশি প্রয়োজন নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ।

কালবেলা: গত ১৫ বছরে অনেক ব্যবসায়ীকে রাজনৈতিক ছায়াতলে থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে দেখেছি। এটি বন্ধে করণীয় কী?

মো. ফজলুল হক: শুধু ব্যবসায়ী নয়, অন্যান্য পেশায়ও আমরা একই রকম অবস্থা দেখেছি। যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন। অনেক সময় হয়তো রাষ্ট্রযন্ত্রের চাপে পড়ে তারা বাধ্য হয়েছেন অন্যায়ে যুক্ত হতে। ব্যবসায়ীরা যদি সরকারের কাছ থেকে খুব বেশি সুবিধা না নেন, তাহলে সরকারের অন্যায় আদেশ উপেক্ষা করা সহজ। আর যদি সরকার থেকে অন্যায় সুবিধা নেন, তাহলে সরকারের বাধ্য হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। নৈতিকতার জায়গায় শক্ত থাকা অনেক জরুরি। তবে ব্যবসায়ী বা সমাজের অন্যান্য পেশায়ই আমরা নৈতিকতার অবক্ষয় কম-বেশি দেখেছি। যারা সেই অবক্ষয়ে পা দিয়েছেন আজ তারা ভুগছেন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো, অন্যায়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলে শেষ রক্ষা হয় না। বেশি বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়, এটা মহান আল্লাহও পছন্দ করেন না। প্রত্যেক পেশার মানুষেরই এই শিক্ষা নেওয়া উচিত।

কালবেলা: অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখা যাচ্ছে বন্ধ হয়ে আছে। সরকার কোনো কোনোটাতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। যে কারখানা বন্ধ রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

মো. ফজলুল হক: ব্যবসা অচল করে দিলে বা বন্ধ রাখলে অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে তা কর্মসংস্থানে ধাক্কা দেবে। উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপরে বহুমুখী প্রভাব পড়বে। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেভাবেই গড়ে উঠুক, এখন যেন তার কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সেটা সরকারের খেয়াল রাখা উচিত। প্রয়োজনে সরকার প্রশাসক নিয়োগ করে বা অন্য কোনোভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে একজন নাগরিক হিসেবে আমার চাওয়া হলো, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ করে না দেওয়া হয়। খারাপ হলেও সত্য যে, যাদের দুর্নীতিবাজ বা অসাধু ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, দেশের ব্যবসার একটা বড় অংশ তারা নিয়ন্ত্রণ করে। হঠাৎ করে যদি তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে দেশের সামগ্রিক সাপ্লাই চেইনে ক্ষত তৈরি হবে। যেহেতু সরকার ব্যবসা করে না, তাই সরকারের কাছে এই ক্ষত নিরাময় রসদের মজুত নেই। তাই সাপ্লাই চেইন যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে সরকার মনোযোগ রাখবে বলে মনে করি। সরকার এরই মধ্যে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছে।

কালবেলা: অনেক সৎ ব্যবসায়ীকে ব্যাংক লোন পেতে কষ্ট হতো আগে। আবার অনেক অসৎ ব্যবসায়ী ভুয়া ব্যবসা দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে...

মো. ফজলুল হক: আমি মনে করি, আর্থিক খাত বা ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের মধ্য দিয়ে এ অবস্থার অনেকটাই সমাধান হবে। সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করাটাই শেষ কথা নয়। ব্যাংক যেন প্রফেশনালি ফাংশন করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যাংকিং সিস্টেমের আরেকটি সমস্যা হলো তেলে মাথায় তেল দিতে পছন্দ করা।আমরা এটাকে বলি, যার টাকার প্রয়োজন নেই ব্যাংক তার পেছনে দৌড়ায়, আর যার টাকার প্রয়োজন আছে সে ব্যাংকের পেছনে দৌড়ায়। হয়তো এটা অন্য একটি বাস্তবতা।

যাদের প্রকৃত অর্থে টাকার প্রয়োজন এবং যাদের মাথায় ভালো বিজনেস আইডিয়া রয়েছে, তাদের কীভাবে ঋণ দেওয়া যায়—সেই পথ সহজ করতে হবে। যদি লুটেরা ব্যবসায়ীদের ঋণ বন্ধ করা সম্ভব হয়, তাহলে অটোমেটিক্যালি সৎ ব্যবসায়ীদের হাতে ব্যাংক ঋণ আসবে। কারণ, ব্যাংক টাকা হাতে নিয়ে বসে থাকতে পারবে না। ব্যাংকের সিস্টেম হচ্ছে, আমানতকারীর থেকে টাকা নিয়ে ঋণগ্রহীতার মধ্যে তা বণ্টন করা। আর এর মধ্য থেকে মুনাফা করা।

যারা ব্যাংক লুটপাট করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে ঋণ নিয়েছে, তাদের যদি ধরা যায় এবং এই ধরনের ঋণ বন্ধ করা যায়, তাহলে আপনা-আপনি প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে পুঁজি চলে আসবে। ব্যাংক নিজ তাগিদে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে তাদের ঋণ দেবে।

কালবেলা: অনেকে অভিযোগ করেন, রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রবেশের কারণেই রাজনীতি নষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

মো. ফজলুল হক: ব্যবসায়ীরা রাজনীতিবিদ হতে পারবেন না—এই ধারণার সঙ্গে আমি খুব একটা একমত নই। একজন ব্যক্তি যখন রাজনীতি করেন, তিনি সংসদ সদস্য না হওয়া পর্যন্ত তার কোনো লিগ্যাল ইনকাম থাকে না। তাহলে তাকে অবশ্যই অন্য কোনো একটি পেশার সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হবে। হয়তো তাকে শিক্ষকতা করতে হবে, চাকরি করতে হবে অথবা ব্যবসা করতে হবে। আমাদের দেশে যারা রাজনীতি করছেন তারা সবাই ব্যবসায়ী নন। এখানে সব পেশার মানুষ রয়েছেন। অন্য পেশার ব্যক্তিরাও অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

এখানে মূল বিষয়টি হলো নৈতিকতা। একজন ব্যক্তি যখন রাজনীতিতে ঢুকবেন, তখন তার নৈতিকতা এবং কমিটমেন্ট ঠিক আছে কি না, সেটি দেখতে হবে। একজন ব্যবসা করেন নাকি শিক্ষকতা করেন, সেটা মূল বিষয় নয়। অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী হওয়ার দরকার নেই। অন্য পেশার মানুষও অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন, এটা আমরা অহরহ দেখছি। অনেকে বলেন, সংসদ সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের স্বার্থেই সব আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকারে দুই-চারজন শীর্ষ ব্যক্তি যে সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই হয়। অন্য সংসদ সদস্যদের মতামত বা ভোট খুব বেশি ম্যাটার করে না। নীতি প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্যদের খুব একটা ভূমিকা থাকে না। যদি নির্বাচন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার অন্য এজেন্ডাগুলোর সংস্কার হয়, তাহলে এসব সমস্যারও সমাধান হবে বলে বিশ্বাস করি।

কালবেলা: ২০২৬ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আপনি কী ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

মো. ফজলুল হক: আমরা গত কয়েক বছরে আমাদের অর্থনীতির যে পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্ত বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়েছি, সেগুলো সঠিক কি না, তা আগে যাচাই করে দেখা দরকার। যে তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক স্ট্যাটাসের উত্তোলন করাতে যাচ্ছি, তা কতটা সঠিক, সেটাই আমরা জানি না। গত ১০ বছরে আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে হিসাব পেয়েছি, তা কতটুকু সঠিক, সেটা যাচাই করতে পারলে আমাদের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্রটি পরিষ্কার হবে। আমরা অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানতে পারলে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে পারব। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া যেমন আমাদের জন্য প্রয়োজন, পাশাপাশি সেই সক্ষমতা আমাদের আছে কি না, তাও যাচাই করা জরুরি।

বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায়, আমাদের অর্থনীতির পিলারগুলো ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা দেখানো হয়েছে, তাহলে আমরা আরও সময় নিতে পারি। একটি জরুরি এজেন্ডা হিসেবে বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় থাকা দরকার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কদমতলীতে ঘরে ঝুলছিল যুবকের মরদেহ

কায়কোবাদ-তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পর্শে প্রাণ গেল ৩ শিক্ষার্থীর

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, বাংলাদেশেও চাপে পড়তে পারেন আদানি

হোয়াটসঅ্যাপে কল রেকর্ড করার উপায়

৩ মাসে জ্বালানি খাতে ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় : জ্বালানি উপদেষ্টা

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ / এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১% মানুষ

সুমনের হ্যাটট্রিকে রাজশাহীর লজ্জার রেকর্ড

রোববার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

ট্রাম্পের সঙ্গে বসতে চান পুতিন

১০

 ছিনতাইকারীর কবলে সেনা সদস্য

১১

চীনা দূতাবাস কর্তৃক আউটস্ট্যান্ডিং প্রমোশনাল পার্টনার অ্যাওয়ার্ড প্রদান

১২

মাদকের টাকা না দেওয়ায় মাকে কুপিয়ে হত্যা

১৩

এবার রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের ৭ দাবি

১৪

সাবেক সতীর্থই মেসির কোচ হচ্ছেন

১৫

বৃষ্টি নিয়ে যে বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

১৬

হৃদয় কাঁদে জয়ার

১৭

যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে কতটা কাজে দেবে এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র

১৮

চাকরি দেবে আগোরা, সপ্তাহে ২ দিন ছুটি

১৯

শীতে জবুথবু কুড়িগ্রাম

২০
X