রাজধানীবাসীর মধ্যে ৫১ শতাংশ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে চাকরি ও ব্যবসা হারিয়ে এ পরিণতি বরণ করেছেন তারা। করোনার আগে তারা দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকলেও মহামারির সময়ে নিচে নেমে আসেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দুদিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের (বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালামনাক-২০২৩) প্রথম দিনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বুধবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে অন্য এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে খাদ্য, সার এবং অপরিশোধিত তেলের দাম। যার প্রভাব পড়েছে দেশে। এ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জাতীয় কল্যাণ ২ শতাংশ কম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কৃষি খাত। ভর্তুকিতে সার বিক্রি উৎপাদন বাড়িয়েছে। ২০২২ সালের প্রথম দিকে পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়তে থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে এ হার আরও বৃদ্ধি পায়। ভর্তুকি সরকারের ওপর অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করে।
গবেষণায় দেখা যায়, করোনার পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণের সময় বিবাহবিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি, কন্যাদের জন্য বয়ঃসন্ধিকালের বিয়ের হার বা সমাজে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে করোনার উল্লেখযোগ্য বিরূপ প্রভাব দেখা যায়নি। তবে চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলছে, করোনা মহামারি চলাকালে তাদের ছেলে বা মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়েছে। এটি দরিদ্রদের জন্য ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য ১০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং উচ্চ-মধ্যবিত্তের জন্য ৮ শতাংশ। করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর সেটি বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়। লকডাউনের সময়টা বাদ দিলে করোনার সময়ে ঢাকা শহরে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২-এ দারিদ্র্য কমেছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট। একই সময়ে অতিদারিদ্র্য কমেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ দারিদ্র্য কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, সরকারি-বেসরকারি সহায়তা। সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক নানাবিধ কর্মকাণ্ডের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ কিছু না কিছু করেছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আগে মানুষ এত গরিব ছিল যে তখন বৈষম্য নিয়ে চিন্তা ছিল না। একবেলা খেয়ে অন্যবেলায় খেয়েছে কি না, সেটি বড় কথা ছিল। এখন সবাই তিনবেলা খেতে পারে। এ কারণে বৈষম্য নিয়ে কথা আসছে। সরকারের নানা উদ্যোগ দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করেছে। এখন বৈষম্য আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা মনে করি, গবেষণা প্রতিবেদনটি সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের আমলে নেওয়া প্রয়োজন। সেইসঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তার মতো কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে তাদের দারিদ্র্য সহনীয় পর্যায়ে আনার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।