চট্টগ্রামের রেলওয়ে মার্শালিং ইয়ার্ড থেকে ৩৯টি ব্যাটারি চুরির ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে বহাল তবিয়তে ফিরিয়ে এনেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। নতুন বছরের শুরুতেই তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। এমনকি এ ঘটনার মূল অভিযুক্তকে কাজে যোগ দিতে অফিস আদেশ জারি করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভাগ।
২০২১ সালের জুলাইয়ে পিকআপ ভর্তি মালপত্র পাচার করার সময় তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছিল রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। কাছাকাছি সময়ে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের কেবিন থেকে ট্রেনের ৫০০ লিটার ডিজেল উদ্ধার করা হয়। একই দিনে দুটি ঘটনায় রেলওয়ের কর্মচারীদের জড়িত থাকার কথা এসেছিল আলোচনায়। অভ্যন্তরীণ তদন্তে রেলের কর্মীদের সম্পৃক্ততার সত্যতাও পাওয়া যায়। গত নভেম্বরে ৩৯টি ব্যাটারি চুরির ঘটনায় চারজনকে আসামি করে অভিযোগ গঠন করা হয়। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই অভিযুক্তদের চাকরিতে বহাল তবিয়তে ফিরিয়ে এনেছে রেল কর্তৃপক্ষ। সদ্য কাজে যোগ দেওয়া সেই দুই আসামি হলেন রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের মেকানিক্যাল ফিটার আনোয়ার হোসেন ও খালাসি জাবেদ হোসেন। রেল অঙ্গনে আলোচিত এ মামলার অন্য দুজন আসামি (বহিরাগত) হলেন পিকআপ চালক মো. মামুন ও রিকশাভ্যান চালক মো. পারভেজ।
এত কিছুর পরও অভিযুক্তরা কাজে যোগ দেওয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে রেলে। তবে কর্মকর্তারা সাফাই গাইছেন। তারা বলছেন, শাস্তি শেষ হওয়ার পর তারা কাজে যোগ দিতে পারে। শাস্তি হয়ে যাওয়ায় কাজে যোগ দিতে কোনো বাধা নেই।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী অজয় কুমার পোদ্দার কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি বিভাগীয় পর্যায় থেকে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তরা যদি কাজে যোগ দিয়ে থাকে, তাহলে হয়তো তাদের শাস্তি শেষ হয়েছে, তাই যোগ দিয়েছে।’
মামলার সর্বশেষ তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি বিভাগীয় প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এটা আমার জানা নেই।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, মামলার অন্যতম আসামি আনোয়ারকে এ বছরের ৪ জানুয়ারি কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন বিভাগীয় প্রকৌশলী শাকের আহমেদ। এ চিঠিতে লাকসাম স্টেশনে আনোয়ারকে আগের পদে যোগদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেন তিনি। চার দিন ধরে নিয়মিত অফিস করছেন আনোয়ার। তার সহযোগী খালাসি জাবেদ হোসেনকে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আনোয়ারের সঙ্গে খালাসি জাবেদ কাজে যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) শাকের আহমেদকে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
এর আগে চট্টগ্রামের মার্শালিং ইয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন আনোয়ার হোসেন। পরে ২০২১ সালের ২৩ জুন সেখান থেকে তাকে বদলি করা হয় পূর্বাঞ্চল রেলের লাকসাম স্টেশন থেকে। কিন্তু সেই বছর লকডাউন চলাকালে চট্টগ্রামে ফিরে গভীর রাতে রেলওয়ের পাওয়ার কারের ৩৯ পিস নতুন ব্যাটারি পাচার করতে গিয়ে পিকআপ, রিকশাভ্যানসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন আনোয়ার ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনার পর রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার মালপত্র পাচারে একটি বিশাল বাহিনীর সক্রিয়তার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে রেলওয়ে তদন্তে কী পাওয়া গেছে, তা খোলাসা করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএনবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ড্যান্ট মো. রেজওয়ান উর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি এখানে ছিলাম না। এখন এ মামলাটির আপডেট কী, সেটা দেখে জানাতে হবে। অভিযুক্ত কাজে যোগ দিয়েছে কিনা, সেটা জানা নেই।’