
‘এক যে ছিল রাজা, তার ছিল এক রানি’—শৈশবে এভাবে রাজা-রানির গল্প শোনেনি—এরকম মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। শৈশবের সেই গল্পের রাজা-রানি আর বাস্তবের রাজা-রানির মধ্যে তফাত অনেক। যদিও এখন আর তেমন একটা এরকম রাজত্বের দেখা মেলে না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে অনেক রাজপরিবার। তবে ১ হাজার ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে থাকা এক রাজপরিবার হলো ব্রিটিশ রাজপরিবার। এ রাজপরিবার নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহও অনেক। প্রাচীনকাল থেকেই সাধারণত সব দেশের রাজ-রাজাদের একটি নির্দিষ্ট পারিবারিক প্রথা রয়েছে। যুগ যুগ ধরে তা কড়াকড়িভাবে মেনে চলা হয়। ব্রিটিশ রক্ষণশীল রাজপরিবারেরও তেমনি অনেক প্রথা রয়েছে। তবে সেই রাজপ্রথা ভাঙার ইতিহাসও কিন্তু ছোট নয়। রাজপ্রথা ভাঙা এরকম অনেক কাহিনিই এবারের আলোচ্য বিষয়।
৪১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্রের ভিত গড়ে ওঠে। যার নেতৃত্ব দিয়েছিল অ্যাংলো-স্যাক্সনরা। তারা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ‘হেপ্টারকি’ নামক এক নতুন শাসনব্যবস্থার প্রচলন করে। এ হেপ্টারকি শাসনব্যবস্থা প্রায় ৪০০ বছর চালু ছিল। হেপ্টারকি শাসনের অবসানের পর উইলিয়াম দ্য কনকারার নিজেকে পুরো ইংল্যান্ডের একক রাজা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনিই ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রথম রাজা। তার হাত ধরেই ইংল্যান্ডে রাজশাসন শুরু হয়। ৯২৭ সালে তাকে ইংল্যান্ডের প্রথম রাজা হিসেবে অন্য রাজারা মেনে নিয়েছিলেন। তার শাসনকাল ছিল ইংল্যান্ডের রাজনীতি ও ইতিহাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। একসময় পুরো বিশ্ব যে ব্রিটিশরা দখল করেছিল, তার বীজ বপন করেছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভিত্তি রাজা ‘উইলিয়াম দ্য কনকারা’ করলেও এ রচনার শেষ কাজটুকু করেন নরম্যানরা। ১০৬৬ সালে নরম্যানরা ইংল্যান্ড-জয় করলে ‘উইলিয়াম দ্য কনকারা’ নিজেকে ইংল্যান্ডের একক রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইংল্যান্ড বিজয়ের পর তিনি একে একে সাতটি রাজ্য নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন, যা এখনো ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ১০০ বছর শাসনের পর ‘উইলিয়াম দ্য কনকারার’ শাসনকাল অধ্যায়ের অবসান ঘটে। এরপর ইংল্যান্ডের ক্ষমতায় আসে টুডররা। ‘টুডরের’ সময়ে সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে। ১৭১৩ সালের পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য হ্যানোভারিয়ানদের অধীনে চলে যায়। হ্যানোভারিয়ানদের পাঁচ প্রজন্ম পর জন্ম হয় রানি ভিক্টোরিয়ার। রানি ভিক্টোরিয়া মাত্র ১৮ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার পরবর্তী বংশধর।
রাজপরিবারের পারিবারিক প্রথার বাইরে যাওয়ার সাধারণত সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও রানি ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের প্রিন্স হ্যারি পর্যন্ত রাজপরিবারের অনেক সদস্য প্রথাবিরোধী কাজ করেন, যা তাদের বেশ আলোচনায় নিয়ে আসে। কেউবা রাজপরিবারের বাইরের কাউকে বিয়ে করে প্রাসাদে নিয়ে আসেন। আবার কেউবা প্রেম ও বিয়ের জন্য রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন।