শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
জুনায়েদ শিশির
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এসি মিলছে না বাড়তি দামেও

এসি মিলছে না বাড়তি দামেও

সকাল থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ইলেকট্রনিকস মার্কেটে ডিলারের দোকানে দোকানে ঘুরছেন রায়েরবাগের ব্যবসায়ী এন হাসান। গেল সপ্তাহে কয়েকটি এসি নিয়েছিলেন। গরম বাড়ার কারণে ইতোমধ্যে দোকানের সব এসি বিক্রি হয়ে গেছে। এখন এসেছেন আরও কিছু এসি কিনতে। কিন্তু ডিলারের দোকানে আজ তিনি পাত্তা পাচ্ছেন না। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়

কয়েকদিনের ব্যবধানে দামও বেড়েছে অনেক। ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানিয়েছেন, গেল ১০ দিনে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ হাজার টাকা করে বেড়েছে এসির দাম।

কয়েকটি ডিলার ও শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে গ্রি, মিডিয়া, জেনারেল, প্যানাসনিক, স্যামসাং, ভিশন, এলজি, ওয়ালটন, শার্প, তোশিবা, মিনিস্টার কোম্পানির এসি পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া ননব্র্যান্ডেরও এসি রয়েছ বাজারে। বর্তমানে সব ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ড কোম্পানির এসি বিক্রি বেড়েছে। খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর কাঠামো ও ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি পর্যায়ে পণ্যটির দাম গড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাসের দাম বাড়ায় কিছুটা দাম বাড়লেও এখন গরমের কারণে কারখানা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়নি। তবে নির্ধারিত কমিশন থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে।

মাঠ পর্যায়ের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল বাজারে ইনভার্টার বা অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবস্থা থাকা প্রতি ১ টনের গ্রি এসির দাম ৪৯ হাজার টাকা, হায়ার ব্র্যান্ডের ৩৫ হাজার, এলিট ৪৩ হাজার, মিডিয়া ৪২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেড় টনের দাম যথাক্রমে ৭৫ হাজার, ৫৭ হাজার, ৫৫ হাজার এবং জেনারেল ব্র্যান্ডের দেড় টনের দাম ৮৩ থেকে ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতি দুই টনের গ্রি এসির দাম ৮৫ হাজার, হায়ার ৬৭ হাজার, এলিট ৫৪ হাজার, মিডিয়া ৬৫ হাজার এবং জেনারেল ৯৩ থেকে ৯৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নন-ইনভার্টার এসির মধ্যে গ্রি কোম্পানির এক টন ৪২ থেকে ৪৩ হাজার, দেড় টনের দাম ৬০ হাজার এবং দুই টনের দাম ৭১ থেকে ৭২ হাজার টাকা। সাধারণ মানের দেড় টনের নন-ইনভার্টার এসির দাম ৪১ থেকে ৪৮ হাজার টাকার মধ্যে। দুই টনের এসির দাম ৫২ থেকে ৭১ হাজার টাকার মধ্যে।

স্টেডিয়াম মার্কেটের তাসফিয়া ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী মো. আবুল কালামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ক্রেতার ভিড়ে ব্যস্ততার জন্য কথা বলতে পারেননি। এ সময় দোকানের প্রধান বিক্রয় প্রতিনিধি মো. বাবুল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ১২ এপ্রিল থেকে বাজারে এসির চাহিদা হু হু করে বাড়তে থাকে। এ সময় সরবরাহ কম থাকায় দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে দাম বাড়লেও ক্রেতারা চাহিদামতো মালপত্র পাচ্ছেন না। অনেকে টাকা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

মার্কেটের অন্যান্য দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে গ্রি ও অন্যান্য কোম্পানির ইনভার্টার এক থেকে দেড় টন এবং এয়ারকুলারের চাহিদা বেশি থাকলেও মার্কেটে পণ্যগুলো আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেকে বেশি দামে দালালির মাধ্যমে খুচরা ক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

স্টেডিয়াম মার্কেটের কয়েকটি কোম্পানির এসির ডিলার ম্যাক্সওয়েল ইলেকট্রনিকসে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতার চাপ সামলাতে তারা দোকানের শাটার নামিয়ে রেখেছেন। অনেকে বাইর থেকে কথা বলে ফিরে যাচ্ছেন। আর যারা বেশি দামে রাজি হচ্ছেন তারা হয়তো এসি কিনতে পারছেন। এই দোকানের ম্যানেজার কালাম বলেন, কাস্টমারের চাহিদা ১০০টির, আমরা ২০টিও দিতে পারছি না। যেজন্য দোকানের প্রবেশপথের শাটার বন্ধ করে রাখছি।

রায়েরবাগের ব্যবসায়ী এন হাসান কালবেলাকে বলেন, গেল ১৩ এপ্রিল দেড় টনের একটা গ্রি এসি কিনেছি ৬০ হাজার টাকায়। আজকে দাম চাচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা। দামাদামি করলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে, মাল নেই। নিলে টাকা দেন, না নিলে পরে পাবেন না। এত দামে কিনে আমরা খুচরা কাস্টমারের কাছে কতটাকা লাভ করব? এই প্রশ্ন রাখেন হাসান।

দাম বাড়ানোর বিষয়ে গ্রি কোম্পানির স্টেডিয়াম এলাকার বিক্রয় প্রতিনিধি উত্তম কুমার মণ্ডল কালবেলাকে বলেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েনি। তবে নির্ধারিত কমিশন থেকে ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। আগে প্রতিটি এসিতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দেওয়া হতো, এখন তা কমে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গরমের কারণে বাজারে এসির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এর প্রভাবে কারখানায় চাপ বাড়ছে। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে যথাযথভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য।

বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সহসভাপতি এম এ রাজ্জাক খান রাজ কালবেলাকে বলেন, গরমের কারণে বাজারে সব ব্র্যান্ডের এসির চাহিদা বেড়েছে। মিনিস্টার এসির চাহিদ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ বাজারে অন্যান্য কোম্পানি দাম বাড়ালেও মিনিস্টার তাদের পণ্যের দাম বাড়ায়নি। তবে ডলার ও আমদানি জটিলতায় স্বাভাবিক কারণে এ বছর এসি উৎপাদন পর্যায়ে দাম কিছুটা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু এই গরমে দাম বাড়ার কোনো বিশেষ কারণ নেই। অনেকে চাহিদা ও সিজন ধরার জন্য দাম বাড়াতে পারে।

তিনি বলেন, এফবিসিসিআই সব সময় ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা না করার জন্য উৎসাহিত করে। আমরা চাই জনগণের সেবা ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণ।

অন্যদিকে, দাম বাড়ার বিষয়ে খাত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে জানান, গেল বাজেটে এসি আমদানিতে পণ্য শনাক্তকরণ নম্বর বা এসএস কোর্ড পরিবর্তন করে এনবিআর। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। এর সঙ্গে ডলার সংকট যোগ হওয়ায় আরও দাম বাড়ে। ফলে গেল বছর উৎপাদন হলেও মৌসুম শেষ হওয়া কোম্পানি নতুন দাম বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যেজন্য তারা এবারের সিজনের অপেক্ষায় ছিলেন। ফলে এখন চাহিদা বাড়ায় তাদের নির্ধারিত দাম বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জব্বারের বলী খেলা ২৫ এপ্রিল

মতিঝিল আইডিয়ালের গভর্নিং বডির নির্বাচন অনুষ্ঠিত

খরুচে বোলিং মোস্তাফিজের, চেন্নাইয়ের হার

এফডিসিতে ৫৭০ ভোটারের সংবাদ সংগ্রহে ৩০০ সাংবাদিক

যশোরে অধিকাংশ টিউবওয়েলে মিলছে না পানি

বিদেশি শ্রমিকদের সুখবর দিল কুয়েত

এফডিসিতে ফিরেছেন নির্বাচন কমিশনার, খোঁজ নেই নিপুনের

চাঁদপুরে পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তা নিখোঁজের ঘটনায় ৮ কর্মকর্তা বদলি

বিআরটিএর অভিযানে ৪০৫ মামলা, ১০ লাখ টাকা জরিমানা 

প্রেমিককে কুপিয়ে জখম, প্রেমিকা আটক

১০

আরও ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি

১১

‘গোপালগঞ্জের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ অচিরেই চালু হবে’ 

১২

‘আমাদের নিজেদের এবং দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যেতে হবে’

১৩

শ্যালকের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেন পলক 

১৪

উৎকলিত রহমানের কবিতা ‘জ্যোতিষ্ময়ীর গান’

১৫

পাবনায় যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

১৬

পহেলা বৈশাখে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণী

১৭

আবহাওয়া নিয়ে আরও বড় দুঃসংবাদ

১৮

উপজেলা নির্বাচনের নামেও প্রহসন করছে সরকার : ভিপি নুর

১৯

ফ্রান্সের ইরানি দূতাবাসে বোমা আতঙ্ক, আটক ১

২০
*/ ?>
X