রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রোজার আগে বিএনপি বড় শোডাউন করবে

রোজার আগে বিএনপি বড় শোডাউন করবে

এক দফার আন্দোলন সামনে রেখে পবিত্র রমজানের আগে ঢাকাসহ সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বড় শোডাউনের মাধ্যমে ইফতার রাজনীতিতে ঢুকতে চায় বিএনপি। এজন্য আগামী ১৮ মার্চ দেশব্যাপী মহানগরে অনুষ্ঠিতব্য যুগপৎ কর্মসূচির সমাবেশকে বেছে নিয়েছে দলটি। রমজানে ‘ইফতার রাজনীতি’ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে যাওয়ার আগে ওইদিন ঢাকায় ব্যাপক লোকসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা করছে বিএনপি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংঘাত এড়িয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালন করতে চায় তারা। এর মাধ্যমে রমজানের পর দাবি আদায়ে বিএনপি যে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে, সরকারকে সেই বার্তা দিতে চায় দলটি। আগামী ২৪ মার্চ থেকে রমজান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান কালবেলাকে বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি চলছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও বাড়ছে। আশা করি, আগামী ১৮ মার্চের সমাবেশের কর্মসূচিতে মানুষের উপস্থিতি আরও বাড়বে। সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ মানুষ তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে আসবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপির চলমান আন্দোলন ক্রমেই বেগবান হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দাবি না মানলে আন্দোলনেই সরকারের পতন ঘটবে, এটা পরিষ্কার। চলমান সেই আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নেতাকর্মীরা মাঠে আছে, মাঠে থাকবে। আন্দোলনে গুলি করা হচ্ছে, তারপরও নেতাকর্মীরা দমেনি। সরকারের পতন ছাড়া তারা কেউ রাজপথ ছেড়ে যাবে না।

গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার বাইরে জেলা ও মহানগরে গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে দলটি। তবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কারণে ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর ওই কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি, ১৬ ও ২৫ জানুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় গণসমাবেশ, ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নে পদযাত্রা, ১৮ ফেব্রুয়ারি মহানগরে পদযাত্রা, ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা শহরে পদযাত্রা, ৪ মার্চ মহানগরের থানায় পদযাত্রা এবং সর্বশেষ ১১ মার্চ মহানগর ও জেলায় মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের একাদশতম কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১৮ মার্চ দেশের সব মহানগরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

১০ দফার পাশাপাশি বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে শুরু থেকে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। তবে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এখন থেকে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সে কারণে ১০ দফা দাবির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে আগামী শনিবার সব মহানগরে সমাবেশ করবে দলটি। একই কর্মসূচি করবে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৫৪ রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। এর মাধ্যমে মূলত দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের দুর্নীতির প্রমাণ সংগ্রহে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। দেশি-বিদেশি মিডিয়া এবং সংস্থার প্রতিবেদন সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের মেগা প্রজেক্টের দুর্নীতি, বিদেশে কার কী সম্পদ রয়েছে, তা বিশ্লেষণ করা হবে। সভা-সেমিনার ছাড়াও দুর্নীতির প্রমাণ তুলে ধরতে লিফলেটও বিতরণ করা হবে।

এদিকে দেশব্যাপী মহানগরে অনুষ্ঠেয় সমাবেশের কর্মসূচি সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর দলটি। সমাবেশ সফলে মহানগর নেতাদের ইতোমধ্যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড। এসব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। কোন নেতা কোন মহানগরে যাবেন, দলের দপ্তর থেকে এখন সেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আগামী শনিবার ঢাকায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। মির্জা ফখরুলের ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা, ঘরোয়া সভা করছেন। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকেও অধীন থানাগুলোকে নিয়ে প্রস্তুতি সভা করা হচ্ছে। প্রস্তুতি সভা করছে দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোও। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে ঢাকায় ফের সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দিতে চায় বিএনপি। এর আগে গত ৪ মার্চ প্রথমবারের মতো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ৫০টি থানায় পদযাত্রার কর্মসূচি করেছে দলটি। এ ছাড়া সর্বশেষ গত শনিবার আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ কিলোমিটার মানববন্ধন করেছে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এদিকে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী জোট ও দলগুলোও আগের মতোই আগামী ১৮ মার্চ ঢাকার রাজপথে শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

এদিকে, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে একদফার আন্দোলনে চূড়ান্ত রূপ দিতে জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে নানামুখী তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোকে আন্দোলনের উপযোগী হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যুবদল ও ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আরও কয়েকটি সংগঠনের নতুন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় আছে। এবারের সম্ভাব্য একদফার আন্দোলনে বিএনপি তাদের সমমনা অন্য দল ও জোটকেও পাশে চায়। সে লক্ষ্যে সম্প্রতি বরিশালে চরমোনাই পীরের সঙ্গে সেখানকার মাহফিলের মেহমানখানায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকও করেছে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরের অংশের সঙ্গেও ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বিএনপি।

দলীয় সূত্র জানায়, এক দফার আন্দোলন সামনে রেখে সংগঠন গোছাতে আসন্ন রমজানকে সাংগঠনিক প্রস্তুতির মাস হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের পাশাপাশি দল ও অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলোও হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রমজানের পর বড় আন্দোলনে নামতে চায় দলটির হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে রমজানে ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে যুগপৎ শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার পাশাপাশি আন্দোলনে সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন পেশাজীবী এবং প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করবে দলটি। এ ছাড়া ইফতারের মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা দলগুলোকেও কাছে টানার চেষ্টা চালাবে বিএনপি। এবার বিএনপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে চারটি ইফতার মাহফিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে, নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় রাখতে কেন্দ্রের পাশাপাশি দেশের সব বিভাগ ও জেলা এমনকি উপজেলা পর্যায়েও ইফতার পার্টি আয়োজনের চিন্তাভাবনা চলছে।

সূত্র আরও জানায়, নির্বাচন ও আন্দোলনের বছর হওয়ায় আসন্ন রমজানে ঘরোয়া রাজনীতির পাশাপাশি জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে মাঠেও সক্রিয় থাকবে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুতের দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধিসহ জনদুর্ভোগ এবং সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রতিবাদে রমজানে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু কালবেলাকে বলেন, রমজানে ঘরোয়া কর্মসূচি থাকবে, সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে, ইফতার মাহফিলও হবে। এর বাইরে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী রাস্তার কর্মসূচিও থাকতে পারে। আমরা আন্দোলনের মধ্যে রয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৬০ হাজার টাকা বেতনে ওয়ার্ল্ড ভিশনে চাকরি

আ.লীগ লুটপাট করে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করেছে : রিজভী

কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা

ইন্টারনেট ছাড়াই ছবি-ফাইল পাঠানো যাবে হোয়াটসঅ্যাপে

নেট দুনিয়ায় ভাইরাল বিমানবালাকে পাইলটের বিয়ের প্রস্তাব

‘হিট অ্যালাট’ এর মেয়াদ বাড়ল

গাজায় জিম্মি ইসরায়েলির ভিডিও প্রকাশ

আ.লীগ নেতা টিপু হত্যা / অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল

‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশেই থাকবে’

দিনাজপুরে ইসতিসকার নামাজ আদায়

১০

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে বিশ্রামে তেভেজ

১১

৪৬তম বিসিএস প্রিলি শুক্রবার, যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

১২

দ. আফ্রিকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে হত্যা

১৩

যমুনা গ্রুপে ডিরেক্টর পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

১৪

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের ইসতিসকার নামাজ

১৫

ছন্দ হারানো মোস্তাফিজকে ‘চাচার’ পরামর্শ!

১৬

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে আসছে নতুন সিদ্ধান্ত

১৭

শরীয়তপুরে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ

১৮

২৩৮ জনের বড় নিয়োগ দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়

১৯

মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে ৬ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ

২০
*/ ?>
X