
সময়টা ১৯৯১ সাল। চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় বাসা ভাড়া নেন মো. মাকসুদ (ছদ্মনাম)। তখন এলাকার মান্নান মার্কেটে তার একটি দোকান ছিল। সেই দোকানে চার ধাপের একটি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হতো। গত ৩০ বছরে মার্কেটের চারপাশ মাটি ভরাট করার কারণে এত উঁচু হয়েছে যে, এখন তার দোকান তলিয়ে গেছে চার ধাপ সিঁড়ির নিচে। একইভাবে তলিয়ে গেছে চকবাজার এবং আশপাশের এলাকার দোকানপাট, বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বর্ষায় বৃষ্টি-জোয়ার একসঙ্গে হলে এ এলাকায় তিন থেকে চার ফুট জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে এক প্রকার চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বাসিন্দাদের। এ ছাড়া যে এলাকায় তিন থেকে চার ফুট পানি ওঠে, সেখানে সড়ক উঁচু করা হচ্ছে মাত্র আড়াই ফুট। ফলে ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি বৃষ্টি-জোয়ারে চকবাজারের আলী শাহ লেনে দুদিন ধরে পানি জমে ছিল। নালা-ড্রেনের ময়লা পানির কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া এড়িয়ে চলেছেন বাসিন্দারা। একটু বৃষ্টি হলেই এলাকায় পানি হাঁটুর ওপর উঠে যায়। এতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোগান্তির শিকার ওই এলাকার এক বাসিন্দা কালবেলাকে বলেন, ‘অল্প বৃষ্টিতে চার ফুটের মতো পানি হয়েছে সড়কে। এরপর তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। তাও যেখানে চার ফুট পানি জমে, সেখানে উঁচু করছে আড়াই ফুট। আর গতবার নালা তৈরি করে স্ল্যাব না বসিয়ে পালিয়েছিল ঠিকাদার। ৩০ বছর ধরে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। নোংরা পানির জন্য ঘর থেকে বের হওয়া যায় না, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না।’
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন ওই এলাকায় দেখা গেছে, আলী শাহ লেন ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন ড্রেন উঁচু করার কাজ চলছে। বৃষ্টিতে ইটের গাঁথুনি এবং সিমেন্টের কাজ বন্ধ থাকার কথা হলেও টিনের ঘেরা দিয়ে গাঁথুনি তৈরির কাজ করছেন ১১ শ্রমিক। পাশেই সড়ক ডুবে আছে পানিতে। বৃষ্টির হাত থেকে সদ্য নির্মিত ইটের গাঁথুনি বাঁচাতে দিয়ে রাখা হয়েছে টিনের ঘেরা।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আরও আগে কাজ শুরুর কথা থাকলেও বৃষ্টি শুরুর পর সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করেছে। ভরপুর বৃষ্টি যখন হচ্ছে, তখন করছে গাঁথুনির কাজ, যা কয়দিন পর ভেঙে যাবে। যুগের পর যুগ আমরা পানিতে কষ্ট পাচ্ছি।
এলাকার বাসিন্দা মো. এয়াকুব কালবেলাকে বলেন, ‘গত ত্রিশ বছরে এলাকাটি অন্তত ১২ ফুট উঁচু করা হয়েছে। এবারও প্রায় তিন ফুট উঁচু হচ্ছে। তাও পানি থেকে নিস্তার মিলছে না। আমি মনে করি, শুধু উঁচু করলে হবে না, মানুষকেও সচেতন হতে হবে। চকবাজার ফুলতলা খাল কয়দিন আগে পরিষ্কার করা হয়েছে। এখন আবার ময়লা ফেলার কারণে ভরাট হয়ে গেছে।’
শুধু চকবাজারের আলী শাহ লেন নয়। চাক্তাই ও হিজড়া খাল ঘিরে কাতালগঞ্জ, ঘাসিয়াপাড়া, জঙ্গিশাহ মাজার লেন, চন্দনপুরাসহ চকবাজার ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। ত্রিশ বছর ধরে জলাবদ্ধতা রুখতে একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে এ চিত্র বদলানো যায়নি। বরাবরের মতো এলাকার ড্রেন, সড়ক উঁচুকরণ এবং সংস্কারে কাজে নেমেছে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, সঠিক পরিকল্পনা, সদিচ্ছা ও সমন্বয়হীনতার কারণে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা জলে ঢালছে সংস্থাটি।
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সিদ্দিকী কালবেলাকে বলেন, ‘আলী শাহ লেনের সড়ক সংস্কার উদ্বোধনের সময় আমরা সবাই ছিলাম। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা যেভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন সেভাবেই কাজ হচ্ছে।’
যে সড়কে চার ফুট পানি উঠে, সেখানে আড়াই ফুট উঁচু করার ব্যাপারে জানতে চাইলে আবু সিদ্দিকী বলেন, ‘চাক্তাই খালে কাজ চলছে তাই এবার পানি বেশি হয়েছে। এটি সবসময় হবে না। তা ছাড়া চার ফুট পানি উঠলে যদি পাঁচ ফুট সড়ক উঁচু করি, তাহলে সবার ঘরবাড়ি তলিয়ে যাবে। তাদের কথাও ভাবতে হবে। উঁচু করাটা একমাত্র সমাধান নয়।’