ভোট সুষ্ঠু হওয়ায় স্বস্তিতে নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন। ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনের আগে অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না থাকলেও গাজীপুরের অ্যাসিড টেস্টে সফলভাবে উতরে গেল সাংবিধানিক সংস্থাটি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরাও। সব শঙ্কাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এমন নির্বাচন আয়োজন করতে পেরে নিজেদের কিছুটা হলেও নির্ভার ভাবছেন সংস্থাটির কর্তারা। তাই স্বস্তিতে রয়েছে কাজী হাবিবুল আওয়াল কমিশন।

ইসি ঘোষিত তিন দফায় ৫ সিটি ভোটের প্রথম দফায় গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকা এই টেবিল ঘড়ি প্রতীকে নির্বাচন করা এ প্রার্থী। অবশ্য তিনি গাজীপুর সিটির সদ্য সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা। জাহাঙ্গীরের মা হিসেবেই তার নির্বাচনে অংশ নেওয়া। আর ছেলের জনপ্রিয়তার সূত্র ধরেই হয়েছেন নির্বাচিত।

ভোটের আগে কিছু আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ছাড়া নির্বাচনটি সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচনে জয়লাভ করে জায়েদা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। এ বিজয় তিনি গাজীপুরবাসী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে ফলাফল মেনে নিয়েছেন আজমত উল্লা খানও। তিনি বলেছেন, পরাজয়ের কারণ পর্যালোচনা করা হবে। কী কী কারণ ছিল, তা জানানো হবে। ফলাফল মেনে নিয়ে বিজয়ীকে অভিনন্দন জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হলে দেশের মানুষ যতটা খুশি হতেন, তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হওয়ায়। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই, জনগণকে ধন্যবাদ জানাই এবং বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানাই।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত তৃতীয় এ সিটি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা ছিল ভোটার ও বিশ্লেষকদের মধ্যে। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল তীব্র। নির্বাচন কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, দুদকে ডাক এবং তার মায়ের নির্বাচনী প্রচারে বাধা ও হামলা—এসব ঘটনা প্রথম থেকেই আলোচনার শীর্ষে নিয়ে আসে এ নির্বাচনকে। এমনকি এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করা কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং প্রার্থীর আচরণবিধি ভঙ্গ নিয়ে শুরু থেকেই বিরক্ত ছিল কমিশন। তাদের একাধিকবার শোকজ, সতর্ক এবং তলবের পরও নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার আশঙ্কার কথা আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে। ইসিও ভোট সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়। শেষ মুহূর্তে জমে ওঠে নির্বাচনের মাঠ। একটি ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করায় দেশের মানুষেরও চোখ ছিল এ নির্বাচনে। নির্বাচনের দিন কেন্দ্র ও বাইরের পরিবেশ ভিন্নরকম থাকলেও কোনো সহিংসতা ছাড়াই শেষ হয় ভোট গ্রহণ। মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। তারা নির্বাচনটিকে আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য বলেও উল্লেখ করেছেন।

ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এ নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো বিতর্কের মুখে পড়তে না হয়, সে ব্যাপারে বেশ সতর্ক ছিল কমিশন। ফলে সিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করা নিয়ে বেশ তৎপর ছিলেন কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এ নির্বাচন কেন্দ্র করেই আগামীতে রাজনীতির মাঠের পরিস্থিতি নির্ধারিত হতে পারে। আবার অনিয়ম হলে আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা হারাতেও পারে ইসি। যা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। ফলে এ নির্বাচন কেন্দ্র করে যাতে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হয় ইসির তরফ থেকে। এমনকি এটিকে নিজেদের অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেই। ফলে তেমন কোনো বিতর্ক ও সহিংসতা ছাড়াই ভোট সুষ্ঠু হওয়ায় আপাতত হাঁপ ছেড়ে বাঁচল আউয়াল কমিশন।

ইসির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, গাজীপুরের ভোট সুষ্ঠু করতে যা যা করার, তার সব প্রস্তুতিই ছিল কমিশনের। তবে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণায় এ প্রস্তুতি আরও জোরালো হয়। নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক না ওঠায় এখন সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কমিশনের জন্য সব নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু ভোটের জন্য কমিশনের আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। গাজীপুরে কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়া ভোট শেষ হওয়ায় সবাই খুশি।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এক প্রতিক্রিয়ায় কালবেলাকে বলেন, এই ভোটে দৃশ্যমানভাবে কোনো অশান্তি ঘটেনি। কোনো অনিয়ম ও সহিংসতাও হয়নি। তবে তার মানে এই নয় যে, এই নির্বাচনটি যেভাবে হয়েছে, দেশের সব নির্বাচন সেভাবে হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com