
ছয় দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ প্রটোকল তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে কূটনৈতিক মহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। তবে বাড়তি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হলেও আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গত সোমবার বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে দেওয়া অতিরিক্ত নিরাপত্তা (পুলিশ প্রটোকল) প্রত্যাহার করার কথা জানায় সরকার। ভিয়েনা কনভেনশনের চুক্তির মাধ্যমে অন্য দেশের কূটনীতিকদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা, নিরাপত্তা, বাসস্থান, আইন প্রয়োগসহ নানা বিষয় নিশ্চিত করে থাকে স্বাগতিক দেশ। বাংলাদেশ সরকারও বলছে, ভিয়েনা কনভেনশন মেনেই কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা (আরএসও)। ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন কালবেলাকে বলেন, মাঝেমধ্যেই পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কূটনৈতিকরা নানা বিষয়ে সাক্ষাৎ করেন। তবে মঙ্গলবার মার্কিন আরএসও কী বিষয়ে সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, তা তিনি জানেন না।
অবশ্য ডিএমপি সূত্র জানায়, মার্কিন আরএসও ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের চলাফেরায় পুলিশ প্রটেকশন বাতিল হওয়া নিয়ে কথা বলেন। বরাবরের মতো পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করেন তিনি। তবে পুলিশ কমিশনার তাকে জানিয়েছেন, জনবল সংকটের কারণে চলাফেরার সময়ে পুলিশ প্রটেকশন দেওয়া সম্ভব না হলেও আনসার সদস্যদের প্রটেকশন থাকছে। তা ছাড়া দূতাবাস ভবন ও কূটনৈতিক পাড়ায় বরাবরের মতোই পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার আন্তরিক। বাংলাদেশে কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ীই দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন রাষ্ট্রদূত অতিরিক্ত নিরাপত্তা সুবিধা পেতেন তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কূটনীতিকদের বেসিক নিরাপত্তা কখনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বাড়তি নিরাপত্তা তুলে নেওয়ায় দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে অন্য কিছুকে মেলানোর সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবীর কালবেলাকে বলেন, ভিয়েনা কনভেনশনে কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এর পরও প্রত্যেক দেশ তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার আলোকেই কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেয়। এটা একেক দেশে একেক রকম। বাড়তি সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়টি এখন বিভিন্ন দেশ কীভাবে নেবে সেটা সেই দেশগুলোর ওপর নির্ভর করে।
ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করি না।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সোমবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ প্রসঙ্গে বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব স্বাগতিক (হোস্ট) দেশের। যে কোনো ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধে পদক্ষেপও নেবে তারাই। আমাদের কূটনৈতিক কর্মী এবং স্থানসমূহের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে বেদান্ত বলেন, নির্বাচনে কোনো দল অংশ নিল কী নিল না তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না যুক্তরাষ্ট্র। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।