শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংসদীয় সীমানায় বড় পরিবর্তন আসছে না

সংসদীয় সীমানায় বড় পরিবর্তন আসছে না

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে কে এম নুরুল হুদা কমিশনের দেখানো পথেই হাঁটছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ফলে এবার সীমানা পুনর্নির্ধারণে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। হুদা কমিশনের সীমানাকে বহাল রেখেই আসন পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করতে যাচ্ছে বর্তমান কমিশন। আজ বুধবার কমিশন সভার পরই এ খসড়া প্রকাশ করা হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে এবারের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এটিকে গুরুত্ব দেওয়া হলে অনেক আসনের সীমানা পরিবর্তন এবং তা নিয়ে বিতর্কও তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা ইসির। নির্বাচন কমিশন এ মুহূর্তে এমন বিতর্কে জড়াতে চায় না। ফলে শুধু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নতুন গঠিত প্রশাসনিক এলাকা অন্তর্ভুক্ত করেই খসড়া তৈরি করছে ইসি সচিবালয়। যদিও আইনে প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনা করে ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদনে উল্লিখিত জনসংখ্যার যতদূর সম্ভব বাস্তব বণ্টনের কথা বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, ‘সীমানা বিভাজনের খসড়া প্রকাশের পর সেগুলোর ওপর যেসব দাবি-আপত্তি আসবে, সেগুলোর শুনানিতে আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করব। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেওয়া হবে। এরপরই চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ করা হবে।’

জানা গেছে, ড. শামসুল হুদার কমিশন গড় জনসংখ্যার কমবেশি সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশকে মানদণ্ড ধরে ২০০১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করে। তখন দেশের মোট জনসংখ্যাকে ৩০০ আসন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে একটি জেলায় কতটি আসন হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ওই জেলার জনসংখ্যাকে আসন সংখ্যা দিয়ে ভাগ দিয়ে গড় জনসংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই গড় জনসংখ্যা, এক জেলার সংসদীয় আসন আরেক জেলায় না যাওয়া এবং ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড একাধিক সংসদীয় আসনে বিভাজন না করার নীতিমালা অনুসরণ করে। বর্তমান কমিশন ২০১৮ সালে কেএম নুরুল হুদা কমিশনের সীমানাকে মূল ভিত্তি ধরেই নতুন সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে নতুন সীমানায় খুব একটা পরিবর্তন আসছে না।

ইসি সূত্র জানায়, আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে আইনি সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। কোনো কোনো সীমানার ভোটার বা প্রার্থীরা মামলাও করতেন। এতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকে ওইসব এলাকার ভোট। এ অবস্থায় ২০২১ সালে ইসিকে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়ে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ’ আইন পাস হয়। ওই আইনের ৭ ধারায় বলা হয়, ‘ইসির সীমানা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে দেশের কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা যাবে না।’ তবে ইসিকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলেও বিতর্ক ও ঝামেলা এড়াতে এবার জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয়, প্রশাসনিক এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। সে অনুযায়ী মাদারীপুর-৩ আসনে ডাসার, সুনামগঞ্জ-১ আসনে মধ্যনগর, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে শান্তিগঞ্জ ও কক্সবাজার-৩ আসনে নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা যুক্তসহ হাতেগোনা কয়েকটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ হচ্ছে।

সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য ইসি জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবদনের অপেক্ষায় রয়েছে—এর আগে নির্বাচন কমিশন থেকে বারবার এমন কথা বলা হলেও বর্তমানে সে অবস্থানে নেই ইসি। গত ৬ ফেব্রুয়ারি জনশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। এ জনশুমারিকে আমলে না নিয়ে অন্তত ৭৫টি সংসদীয় আসনে জনসংখ্যার বড় ব্যবধান রেখেই সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইসি। এসব সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট জেলার গড় জনসংখ্যার চেয়ে ২৬ থেকে ৮৮ শতাংশ পার্থক্য রয়েছে। এই ৭৫টির মধ্যে ১৮ আসনে জনসংখ্যার ব্যবধান ৫১ থেকে ৮৮ শতাংশ। বাকি ৫৭টি আসনে জনসংখ্যার ব্যবধান ২৬ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। এ পার্থক্যের কারণে ঢাকা জেলার গড় জনসংখ্যার চেয়ে একটি আসনে ৮৮ শতাংশ বেশি মানুষ আছে। অপরদিকে আরেকটি আসনে গড় থেকেও ৬৩.৩১ শতাংশ কম জনসংখ্যা রয়েছে। অথচ দুটি আসনের সংসদ সদস্যের মর্যাদা একই। এ ব্যবধান রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ হলে যশোর-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ৮ লাখ ২ হাজার ৯৪৪ জন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

অপরদিকে একই জেলার যশোর-৬ আসনের জনপ্রতিনিধি হবেন ২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩১ জনের। জনসংখ্যার এত বড় ব্যবধানের কারণে আসনভিত্তিক সংসদ সদস্য প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়সহ অন্যান্য কার্যক্রমেও ভিন্নতা আসবে। সেজন্য আসন পুনর্বিন্যাসে জনসংখ্যা তথা জনশুমারিকে বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু বর্তমান কমিশন সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রায় আগের সীমানাকেই বহাল রেখে খসড়া প্রকাশ করতে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গেলে নানা ধরনের প্রশাসনিক অসুবিধা সৃষ্টি হবে। তাই সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখণ্ডতার বিষয়টি এবার সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ব্যারিস্টার খোকনের দলীয় পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি 

বাড়ি ফেরা হলো না বাবা-ছেলের

বাংলাদেশের দাবদাহ নিয়ে যা বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

অনুষ্ঠিত হলো বিইউএইচএস -এর প্রথম সমাবর্তন

ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে : ম্যাখোঁ

ছেলেদের দোষে ডুবছেন মাহাথির মোহাম্মদ

হিজাব আইন না মানায় ইরানে ব্যাপক ধরপাকড়

তীব্র তাপপ্রবাহে বৃষ্টি চেয়ে হাজারো মুসল্লির কান্না

মানব পাচারের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

১০

ঝিনাইদহে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন

১১

কারিগরির ফাঁকা সনদ মিলল তোষকের নিচে, গ্রেপ্তার কম্পিউটার অপারেটর

১২

ঝিনাইদহে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

১৩

ভোট দিলে যে শহরে মিলবে ফ্রি বিয়ার, ট্যাক্সিসহ নানা সুবিধা

১৪

কুমিল্লায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু

১৫

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফখরুলের সাক্ষাৎ

১৬

চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ

১৭

সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী 

১৮

৭৩ বছরে ছাত্র ইউনিয়ন  

১৯

কৃষক খুনের ঘটনায় থামছে না ভাঙচুর ও লুটপাট

২০
*/ ?>
X