হাসান আজাদ
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিদ্যুৎ খাতে বাড়ছে ডলার সংকট

বিদ্যুৎ খাতে বাড়ছে ডলার সংকট

দিন দিন বিদ্যুৎ খাতে ডলারের সংকট প্রকট হচ্ছে। এ কারণে প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। ব্যাহত হচ্ছে কয়লা আমদানি। সংকটের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতেও তৈরি হয়েছে জটিলতা। এ ছাড়া ডলারের অভাবে বিদ্যুৎ খাতের নেওয়া বিদেশি ঋণও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আগামীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চিন্তিত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাকি তিন মাস এবং আগামী অর্থবছরে কী পরিমাণ মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে, এর একটি সম্ভাব্য প্রাক্কলন করেছে পিডিবি। প্রাক্কলন অনুযায়ী আগামী ১৫ মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে। আগামী মাসে ডলার সংকট ও চাহিদার প্রাক্কলন বিস্তারিত উপস্থাপন করে বিদ্যুৎ ও অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

পিডিবির সদস্য (অর্থ) সেখ আকতার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ডলার সংকট চলছে। ডলার না পাওয়ার কারণে আমাদের অনেক বিল আটকে গেছে। যা দিতে পারছি না। এ জন্য আমরা নিয়মিত মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাকি তিন মাস বিভিন্ন ধরনের বকেয়া পরিশোধে প্রয়োজন হবে ২১৮ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের জন্য প্রয়োজন হবে ৩৭৩ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আগামী ১৫ মাসে বকেয়া মেটাতে প্রয়োজন হবে মোট ৫৯২ কোটি ১১ লাখ ডলার।

জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই চাহিদা অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল আমদানি করা যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিপরীতে ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিল বকেয়া পড়েছে। প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের বাকি তিন মাসে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে ৩৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার লাগবে। এই হিসেবে চলতি অর্থবছরে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে মোট খরচ হবে ৮৯ কোটি ডলার। দেশের বেশ কিছু আইপিপি (ইন্ডিপেনন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার) ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সাধারণত ফার্নেস অয়েলে চলে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরে ফার্নেস অয়েল আমদানি খরচের তিন ভাগের এক ভাগেরও কম লাগবে আগামী অর্থবছরে। কারণ আগামী অর্থবছরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হলে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হবে। ফলে সংগত কারণেই আগামী অর্থবছরে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা কমে আসবে। পিডিবির প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে ফার্নেস অয়েল কেনায় ব্যয় হবে ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

জানা গেছে, বর্তমানে ভারতের ৬টি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে প্রতি মাসে আমদানি বিল ১০ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে গত চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে চারটি কেন্দ্রে বিল বকেয়া রয়েছে। আর গত নভেম্বর থেকে বাকি দুটি কেন্দ্রে বিল বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে ভারতের কড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আদানির বিদ্যুৎ আসছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে আগামী তিন মাস বিদ্যুৎ আমদানির বিল ৪৭ কোটি ৫০ লাখ পরিশোধ করতে হবে। আর আগামী অর্থবছরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিপরীতে ১৭৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার বিল দিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি কয়লাভিত্তিক বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে। এ জন্য কয়লার চাহিদা বেড়ে যাবে। চলতি অর্থবছরের বাকি তিন মাস কয়লা আমদানি বাবদ ৫৭ কোটি ৩৫ লাখ ডলার প্রয়োজন। আর আগামী অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫১ কোটি ৩১ লাখ ডলার।

এদিকে, বর্তমানে বেসরকারি খাতে ছয়টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এগুলো ক্যাপাসিটি চার্জ ডলারে পরিশোধ করতে হয়। এ জন্য চলতি অর্থবছর বাকি তিন মাসে ব্যয় হবে ১৬ কোটি ১৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে চারটি কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে। বাকি দুটি কেন্দ্রের চুক্তি শেষ হবে আগামী অর্থবছর। এর মধ্যে একটি আগস্ট ও অন্যটির চুক্তি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। এতে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় অনেক কমে আসবে। আগামী অর্থবছর লাগবে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।

এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পিডিবি সাধারণত দুই ধরনের ঋণ নিয়ে থাকে। এর মধ্যে এক্সপোর্ট ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির আওতায় নেওয়া হয় ইসিএ ঋণ। সাধারণত বহুজাতিক ব্যাংকগুলো কঠিন শর্তে এ ঋণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহজ শর্তের দীর্ঘমেয়াদি ঋণও রয়েছে পিডিবির। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর ছয় মাসে ইসিএ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার এবং আগামী অর্থবছর পরিশোধ করতে হবে ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কিস্তি বাবদ চলতি অর্থবছর দরকার হবে ১ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আর আগামী অর্থবছর গুনতে হবে ২ কোটি ৮১ লাখ ডলার। জানা গেছে, এরই মধ্যে কয়লা ও ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বকেয়া পড়েছে ৭৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তাই আগামী দিনগুলোতে ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক করা না গেলে গ্রীষ্মে আবার সংকট বাড়বে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ যাদের আর্থিক উন্নতি হতে পারে

সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতার অভিযোগে কসবায় ছাত্রলীগের কমিটি বিলপ্তি

ছুটির আগেই ক্যাম্পাস ছাড়ছে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

ঢাকাসহ যেসব অঞ্চলে বজ্রবৃষ্টি হতে পারে

গাজীপুরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২

প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আজ

বসন্ত গায়ে মেখে রঙিন হয়ে উঠেছে শিমুল

২৯ মার্চ : নামাজের সময়সূচি

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ফরিদপুরে স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকের উদ্ভাবিত ‘লালমি’

১০

চাঁদপুরে একদিনেই পুকুরে ডুবে ৩ শিশুর মৃত্যু

১১

পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু 

১২

সকালেই যেসব জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৩

পুকুরে মাছের সঙ্গে উঠে এলো মরদেহ

১৪

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ওপর হামলা, স্বর্ণালংকার ও টাকা লুটের চেষ্টা

১৫

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান

১৬

বাকেরগঞ্জে অনুমোদন বিহীন দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল বন্ধের দাবি

১৭

টিসিবির পণ্যের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক

১৮

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শালিকে কোপাল দুলাভাই 

১৯

৯ মাসেই রির্জাভ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

২০
*/ ?>
X