চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. গোলাম ইয়াজদানীকে মারধরের ঘটনার এক মাস কেটে গেছে। গত ২৯ জানুয়ারি সাধারণ সভা শেষে নগর ভবনে যাওয়ার পর তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। এরপর থেকে নগর ভবনে আর অফিস করেননি তিনি, সবশেষ গত মঙ্গলবারের (২৫তম) সাধারণ সভায়ও যোগ দেননি। ভুক্তভোগী এ কর্মকর্তা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এখন এ ঘটনায় চসিকের তদন্তে আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চসিকের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি বদলি হচ্ছেন মারধরের শিকার সেই প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী।
প্রকৌশলী মো. গোলাম ইয়াজদানী কালবেলাকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তারা (চসিক) আমাকে কিছু জানায়নি। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদনে কী দেওয়া হয়েছে সেটাও জানানো হয়নি।’
নগর ভবনে আর অফিস করবেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমি অফিস করিনি। করব কিনা সেই সিদ্ধান্ত এখনো নিইনি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’
গত ২৯ জানুয়ারি সাধারণ সভা শেষে নগর ভবনে গিয়ে মারধরের শিকার হন পিডি গোলাম ইয়াজদানী। অনৈতিক তদবির শেষে কাজ না পেয়ে ঠিকাদাররা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিক মামলার পাশাপাশি ১২ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে চসিক। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার হন পাঁচ আসামি। সবশেষ ২২ ফেব্রুয়ারি জমা দেওয়া রিপোর্টে চারটি অসংগতি উঠে আসে বলে জানা গেছে। তা ছাড়া নগর ভবনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা জোরদার এবং টেন্ডারের গোপনীয়তা রক্ষায় মোট ১৪ দফা সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। তবে সেই কমিটির রিপোর্ট সম্পর্কে ভুক্তভোগী পিডি গোলাম ইয়াজদানীকে কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে সাধারণ সভা ও নগর ভবনে পিডি অনুপস্থিত থাকায় নানা কানাঘুষা চলছে। হামলার শিকার গোলাম ইয়াজদানী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। সততা, দক্ষতা এবং স্বচ্ছ ইমেজের কারণে গত ১৪ আগস্ট তাকে চসিকের সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
পিডি সাধারণ সভায় যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে চসিক মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম কালবেলাকে বলেন, ‘উনি না আসার বিষয়টি মেয়রকে জানিয়েছি। মেয়র এটা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা বলবেন। যদি উনি না আসেন তাহলে মন্ত্রণালয় যা সিদ্ধান্ত দেবেন, তাই হবে।’
পিডিকে তদন্ত প্রতিবেদন না পাঠানো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলুন।’ এ প্রসঙ্গে চসিক সচিব খালেদ মাহমুদও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
চসিকের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘পিডি যদি না আসেন, তাহলে প্রজেক্ট তো বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছে। সিটি করপোরেশনের উচিত কোনো মান-অভিমান থাকলে সমাধান করে নেওয়া। এভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করলে তো হবে না। পিডি না এলে হয়তো নতুন পিডি নিয়োগ হবে। এটা ছাড়া অন্য কোনো পথ তো খোলা নেই।’
এদিকে মঙ্গলবারের সাধারণ সভায় ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রকল্প কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে একজন ঠিকাদারকে এক টেন্ডার নোটিশে একাধিক কাজ দেওয়া হবে না। আর যেসব ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।’
সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন কাউন্সিলর কালবেলাকে বলেন, নগর ভবনে পিডির ওপর হামলার ইস্যু চসিকের ২৫তম সাধারণ সভায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তা ছাড়া আসন্ন জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বয় সাধন, অবৈধ দখল হটিয়ে আয়বর্ধন প্রকল্প বাড়ানো এবং আন্দরকিল্লায় নিজস্ব অর্থায়নে মূল ভবন তৈরির কাজের বিষয়ে গুরুত্বে সঙ্গে আলোচনা হয়।