কমিউনিটি ক্লিনিক স্বীকৃতি পেল জাতিসংঘে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী উদ্যোগ জাতিসংঘে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ রেজ্যুলেশন আকারে গৃহীত হয়েছে। এই রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবায় সাম্য আনয়নে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করেছে।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা: সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শিরোনামের ঐতিহাসিক রেজ্যুলেশনটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেজ্যুলেশনটি
উপস্থাপিত হলে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনস্বরূপ জাতিসংঘের ৭০টি সদস্য রাষ্ট্র এ রেজ্যুলেশনে কো-স্পন্সর করে।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবন ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’কে জাতিসংঘে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া বাংলাদেশের সবার জন্য গর্বের। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে এক অনুকরণীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেল এই রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে। কমিউনিটি ক্লিনিক বাংলাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এখানে জমি জনগণ দিচ্ছে, ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার, সেবাদানে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী—সেটি সরকার দিচ্ছে। ওষুধ, যন্ত্রপাতিসহ সব উপকরণ দিচ্ছে সরকার।
জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে অন্য দেশগুলোকে বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাকে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগকে জাতিসংঘ স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা প্রদানের ক্ষেত্রে অংশীদারত্বের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলছে।
স্থায়ী মিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর আগে সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলেশনটি উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল মুহিত।
রাষ্ট্রদূত মুহিত তার বক্তব্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনে এই রেজ্যুলেশনের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেন। জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক এই রেজ্যুলেশনের অনুমোদনকে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
মুহিত বলেন, রেজ্যুলেশনটির সফল বাস্তবায়ন কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এই রেজ্যুলেশনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। কারণ এটি সদস্য দেশগুলো, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এই কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তন ও বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং দাতাদের যথাযথ কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
দেশের মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যা তৃণমূল পর্যায়ে বিপ্লব ঘটিয়েছে। মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকার এ পর্যন্ত সারা দেশে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারত্বে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে।