রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩, ০৭:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এখনো অনড় বিএনপি

এখনো অনড় বিএনপি

নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নে অনড় বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচারে মানুষ চরম অতিষ্ঠ। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা বিএনপিকেই বেছে নেবে। তাই নির্দলীয় সরকার ইস্যুতে কোনো ছাড় দেবে না বিএনপি। এদিকে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত সংলাপে দেওয়া কোনো ওয়াদা না রাখায় এবার সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপেও যাবে না দলটি। রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যেতে চায় তারা। সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বৈঠক থেকে এই স্পিরিট পাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। রমজানের পর দলটির বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি আর কোনো ছাড় দেবে না। এ দেশের মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তারা এই সরকারের পতন চায়। তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই এদের বিদায় করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।

মহাসচিব বলেন, সত্যিকার অর্থে যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এ কারণে তারা চাচ্ছে দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কেউ বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করবে না, কেউ কথা বলবে না এবং নির্বাচনটা তাদের মতোই করবে।

দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে নামে বিএনপি। আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার অবস্থানে অটল থাকে বিএনপি। একপর্যায়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তখন থেকে তাকে ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয় দলটি।

কিন্তু নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই অবস্থান পরিবর্তন করে বিএনপি। গণফোরাম সভাপতি ভিন্ন মতাদর্শের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে খালেদা জিয়াকে ছাড়াই ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। নির্বাচনের আগে ড. কামালের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। দলটির দাবি, ওই সংলাপে দেওয়া কোনো ওয়াদাই পূরণ করেনি সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপে দেওয়া ওয়াদা রাখা হয়নি। তাই এবার সরকারের সঙ্গে আমরা আর সংলাপ করব না। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সংলাপের ফল কী? এই প্রধানমন্ত্রী সবার সামনে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। পুলিশ আর গ্রেপ্তার করবে না, কোনো মামলা দেবে না। তার বক্তব্যের তিন দিন পর থেকে সারা দেশে পুলিশি নির্যাতনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা সব পালিয়ে গেছেন। ঘরে থাকতে পারেননি, রাস্তায়ও থাকতে পারেননি। আমার গাড়ির ওপরও আক্রমণ হয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস পরাজয় ঘটে বিএনপির। নির্বাচনে দলটি মাত্র ছয় আসন পায়। আর জোটগতভাবে পায় ৮টি। যদিও বিএনপির দাবি, ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করা হয়েছে।

তবে নির্বাচনে পরাজয়ের পর ঘুরে দাঁড়াতে সংগঠন গোছানোর কাজে মনোযোগ দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এরপর গত ২২ আগস্ট থেকে জনস্বার্থ ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। সারা দেশের উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের পর ঢাকায় ১৬টি জনসভা করে দলটি। এরপর ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করে। দলটির দাবি, হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার, পরিবহন বন্ধ করাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রতিটি সমাবেশে জনতার ঢল নামে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের এই অংশগ্রহণ দলের হাইকমান্ডকে বড় আন্দোলনে যেতে আশাবাদী করে তোলে।

বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি শুরু করলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দাবি আদায়ের একপর্যায়ে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়। লক্ষ্য, আন্দোলনকে বেগবান এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করা। তখন থেকেই বৃহত্তর ঐক্য গঠনে মনোনিবেশ করে দলটি। তবে জামায়াতকে নিয়ে কয়েকটি দলের আপত্তিতে দাবি আদায়ে কৌশলের অংশ হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৪ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগর এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে দলটি। একাদশতম কর্মসূচি হিসেবে আগামীকাল ১৮ মার্চ দেশের সব মহানগরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

দাবি না মানলে একদফা আন্দোলন

এদিকে দাবি না মানলে আগামীতে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। সেই আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিতে দীর্ঘদিন ধরে দূরে কিংবা নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীদের একই ছাতার নিচে আনার উদ্যোগ নেয় হাইকমান্ড। এ প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি সাবেক ছাত্রনেতাদের তত্ত্বাবধানে ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির সমর্থনে বিজয়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর ৪ হাজার জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। প্রথম ধাপে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০ সাংগঠনিক বিভাগের সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এসব সভায় ২ হাজার ১৭ জন ইউপি চেয়ারম্যান অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ৩১৫ জন বক্তব্য দেন। সেখানে বিএনপিকে সরকারের কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে রাজপথেই দাবি আদায়ের তাগিদ দেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। বিএনপির তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত দাবি করে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিভেদ নিরসন করে ঢাকাসহ সারা দেশে সংগঠন গুছিয়ে হাইকমান্ডকে পরিকল্পিতভাবে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর পরামর্শ দেন তারা। কেন্দ্র থেকে যে কর্মসূচিই দেওয়া হোক, জীবন দিয়ে হলেও তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন সাবেক ও বর্তমান এসব ইউপি চেয়ারম্যান।

বৈঠকের অর্জন সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সারা দেশের তৃণমূলের সার্বিক চিত্র জানা গেছে। কারণ, তারা তৃণমূলের বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি। আন্দোলন নিয়ে তারা তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে আগামীতে দলের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচিই দেওয়া হোক, তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করছেন। এই মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে দলের তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের বন্ধন আরও শক্তিশালী ও মজবুত হয়েছে, যা আগামীতে আন্দোলন সফলে সহায়ক হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তিন মামলায় মামুনুল হকের জামিন 

বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে সাবেক আর্জেন্টাইন তারকা

ঢাকার ভবন মালিকদের হুঁশিয়ারি দিলেন মেয়র তাপস

এফডিসিতে হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন 

সেই নারী কাউন্সিলর চামেলীকে দল থেকে বহিষ্কার

তীব্র গরমে বিশ্বজুড়ে বছরে ১৮৯৭০ শ্রমিকের মৃত্যু

আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি নিয়োগ

যুদ্ধের মধ্যেই মন্ত্রীকে আটক করলেন পুতিন

সকালে ইসতিসকার নামাজ আদায়, রাতে নামল স্বস্তির বৃষ্টি

তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা

১০

অফিসার নিয়োগ দেবে কাজী ফার্ম, আবেদন করুন দ্রুত

১১

হিট স্ট্রোকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মৃত্যু

১২

অন্তঃসত্ত্বা নারীর চিকিৎসা করলেন না ডাক্তার, সমালোচনার ঝড়

১৩

টাইগারদের সঙ্গে সিরিজের জন্য জিম্বাবুয়ে দল ঘোষণা

১৪

থাইল্যান্ড পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

১৫

চাকরি দিচ্ছে কাজী ফার্মস, নেই বয়সসীমা

১৬

কালবেলায় প্রতিবেদন প্রকাশ / ভূমিদস্যু কামরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১০ আইনজীবীর আবেদন 

১৭

আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত

১৮

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে / হঠাৎ ইরান সফরে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দল

১৯

ল্যাবএইড হাসপাতালে চাকরির সুযোগ, ৪৫ বছরেও আবেদন

২০
*/ ?>
X