টঙ্গীতে জায়েদা ও জাহাঙ্গীরের ওপর ফের হামলা

আলম।
আলম।

নির্বাচনী প্রচারে বের হয়ে গতকাল শনিবারও হামলার শিকার হয়েছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল বিকেলে টঙ্গীর গরুহাটা এলাকায় এ হামলার শিকার হন তারা। এ সময় হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে জায়েদা খাতুন ও তার ছেলেকে উদ্ধার করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টঙ্গীর মধুমিতা রোড, আরিচপুর, বউবাজার ও জামাই বাজারে প্রচার শেষ করে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন। প্রচারের একপর্যায়ে তারা নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বাড়ির কাছে গরুহাটায় পৌঁছালে নৌকার মিছিল নিয়ে বেশ কিছু লোক টেবিল ঘড়ির প্রার্থী ও কর্মীদের ঘিরে ফেলে। প্রায় দেড় ঘণ্টা টেবিল ঘড়িকে ঘিরে নৌকার লোকজন মিছিল করতে থাকে। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় কমপক্ষে ১০ কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি জায়েদা খাতুনের। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।

পরে জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে নিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয় ও তাদের নিজ বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষ থেকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল বলেন, আওয়ামী লীগের কেউ কোনো হামলা করেনি। এটা জাহাঙ্গীরের নাটক। এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলামকে ফোন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর দুই দিন আগেও টঙ্গী এলাকায় টেবিল ঘড়ির প্রার্থীর ওপর হামলা হয়। ওই ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। দুই দিনের মাথায় গতকাল শনিবার আবারও হামলার ঘটনা ঘটল। এ বিষয়ে জায়েদা খাতুন নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে রোদ, গরম ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। পথসভা, কর্মিসভাসহ নানা উপায়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যস্ত তারা। নাগরিক সমস্যা সমাধানে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি আর উন্নয়ন পরিকল্পনা। প্রচারের শেষ সপ্তাহে এসে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছেন প্রার্থীরা। ভোটাররাও তাদের সিদ্ধান্ত পাকা করছেন। তারা বলছেন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা চান তারা। এজন্য যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচনে বেছে নেবেন তারা।

গতকাল সকালে মোগরখাল এলাকায় গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান। ভোট প্রার্থনা করে নৌকার প্রার্থী বলেন, আগামীকাল (আজ) ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সেবার খাতগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ইশতেহারে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে তিন স্তরের একটি পরিকল্পনা নিয়ে আমি ইশতেহার ঘোষণা করব।

তরুণ ভোটারদের নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লা বলেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহারে সবাইকে তো চাকরি দিতে পারব না, তবে তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য অনেক কর্মসূচি রয়েছে। কারিগরি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন ট্রেডে মানুষকে প্রশিক্ষিত করে তাদের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে। গাজীপুরে ভোটযুদ্ধ উৎসবমুখর পরিবেশে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পরে যোগিতলা, ওয়ারল্যাস গেট, পালেরপাড়া, বারবৈকা, দিঘির চালা, ইটাহাটার মতি মার্কেট, কলাবাগান, নাওজোড়, কড্ডা বাজার, ইসলামপুর, ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগ করেন আজমত উল্লা খান।

এদিকে নগরীর জয়দেবপুর বাজার, বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন। এ সময় তিনি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারে আমার সমস্যা হচ্ছে না, জনগণের ভালো সাড়া পাচ্ছি। কিছু কিছু অপ্রীতিকর খবর শোনা যাচ্ছে, এগুলো নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের আন্তরিকতা জরুরি বলে আমি মনে করি। সরকার আন্তরিক থাকলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব। বিগত কয়েকটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, কারচুপির অভিযোগ আছে। এ অবস্থায় আমার বিশ্বাস সরকার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে, আন্তরিক হবে এবং নিরপেক্ষ হবে। আর নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহানূর ইসলাম রনি সদর থানার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, মানুষ ১৭ বছর ধরে ভোট দিতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচনের চেষ্টা করছে, তবে সাধারণ মানুষের আস্থা মনে হচ্ছে না ফিরে এসেছে। আমরা এজেন্ট দিতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। মানুষ বলছে, শুধু নৌকার এজেন্ট থাকতে পারবে, অন্য প্রার্থীর না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যদি আশ্বস্ত করতে না পারে এবং ভোটাররা যদি ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সাহস না পান, তবে ভোটার উপস্থিতি কম হবে।

সরে দাঁড়ালেন বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী

বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কার হওয়ার পর গাজীপুর মহানগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান আজমল ভূঁইয়া প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সদর থানা বিএনপির সভাপতি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি অনুগত থেকে ১৯৮৪ সাল থেকে ছাত্রদল, যুবদল করে ধারাবাহিকভাবে মূল দল বিএনপিতে দলীয় এবং সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে আসছি। এ সময়ের মধ্যে আমি বারবার সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করেছি এবং দলকে সুসংগঠিত করে আসছি। আশপাশের স্থানীয় নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রার্থীরা সাম্প্রতিক সময়ে অংশগ্রহণ করার কারণে বুঝতে পারিনি, দলীয় হাইকমান্ড এতটা কঠিন মনোভাব পোষণ করছেন।

গাজীপুর সিটির নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ২৫ মে। প্রার্থীদের নির্বাচন আচরণবিধি মানতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com