
সরকারের সঙ্গে আর কোনো সংলাপ হবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি কোনো ছাড় দেবে না। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপে দেওয়া ওয়াদা রাখা হয়নি। সুতরাং সরকারকে আহ্বান জানাব, অবিলম্বে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তাতে যারা নির্বাচিত হবে, মাথা পেতে নেব। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা সংলাপ নাকচ করে দিয়েছি। আগামী নির্বাচন শুধু অনিশ্চিত নয়, আওয়ামী লীগ দায়ী হবে আগামী নির্বাচনে যদি আরও খারাপ কিছু ঘটে। আমরা আর ছাড় দেব না, এদেশের মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। ইনভেস্টিগেশন করলে দেখবেন মানুষ কী বলে। তারা চায় পরিবর্তন।
গত সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল। এসময় দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইসমাঈল জবিউল্লাহ ও কামরুজ্জামান রতন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে যমুনা নদী সংকোচন প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে দাম্ভিকতার বহিঃপ্রকাশ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, অনির্বাচিত স্বঘোষিত, প্রবল প্রতাপশালী, অহংকারী, দাম্ভিক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন–তার ওপর কোনো চাপই কাজ করবে না। এখানেই বোঝা যায়, এ দেশ ও মানুষের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব নেই। আমরা আগেই বলেছি যে, তার সঙ্গে সংলাপ করব না। কারণ তিনি তো কথাই রাখেন না। আমরা একবারের জন্যও ডায়ালগের কথা বলিনি। যারা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলে আটকে রাখে–তাদের সঙ্গে আমরা কী সংলাপ করব! ওই মামলায় প্রত্যেককে ৭ দিনের মধ্যে জামিন দেওয়া হলেও খালেদা জিয়াকে এখন পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ। তিনি ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে আমাদের সবার সামনে মিটিংয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন, নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। পুলিশ আর গ্রেপ্তার করবে না, মামলা দেবে না, নির্বাচন পর্যন্ত। তার বক্তব্যের তিন দিন পর থেকে সারা দেশে পুলিশি নির্যাতনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা সব পালিয়ে গেছে। ঘরে থাকতে পারেনি, রাস্তায়ও থাকতে পারেনি। আমি বিএনপির মহাসচিব, আমি যে এলাকায় গিয়েছি সেখানে আমার গাড়ি ও গাড়িবহরে আক্রমণ হয়েছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। নির্বাচনের ৭-৮ দিন আগ থেকে সেখানে নতুন নতুন প্লট তৈরি করা হয়েছে। এর পরও যদি শেখ হাসিনা বলেন যে, রেজাল্ট কী? রেজাল্ট তো আপনিই জানেন যে, আপনি কী করেছেন। সুতরাং বিএনপি একা নয়, সব রাজনৈতিক দল বলছে যে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, যদি সাহস থাকে আপনাদের, এতই যদি উন্নয়ন করে থাকেন, এতই যদি জনগণের ভালোবাসা থাকে, তাহলে আপনি পদত্যাগ করেন এবং একটা কেয়ারটেকার সরকারকে দায়িত্ব দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণ ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করার বিভিন্ন তথ্যচিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে রেন্টাল ও আইপিপি কেন্দ্রগুলোতে ৭০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও সরকার ক্যাপাসিটি চার্জের পেছনে ২১৬ কোটি ডলার প্রদান করছে।