বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০৭:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সুপ্রিম কোর্টে কলঙ্কজনক ঘটনা

সুপ্রিম কোর্টে কলঙ্কজনক ঘটনা

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুদিনব্যাপী নির্বাচনের প্রথম দিনে গতকাল বুধবার একতরফা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশি পাহারায় কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে সমিতির আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে একতরফা ভোটগ্রহণের প্রতিবাদ করায় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জের শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন আইনজীবী। পুলিশি নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। সংবাদ সংগ্রহকালে প্রায় ১০ থেকে ১২ জনের মতো সাংবাদিক আহত হয়েছেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীকে জানিয়ে বিচার দাবি করেছেন উচ্চ আদালতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ল রিপোর্টার্স ফোরাম’।

সমিতির প্রথম দিনের ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীদের। আজ বৃহস্পতিবারও দ্বিতীয় দিনের মতো তারা ভোট গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সমিতির নির্বাচন পরিচালনার জন্য নতুন উপকমিটি গঠন করে ফের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। তারা আইনজীবীদের ওপর পুলিশি হামলারও বিচার দাবি করেছেন। বিষয়টি তারাও তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন। এ ছাড়া আজও তারা তাদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এদিকে সমিতির ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও কলঙ্কজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন আইনজীবীদের অনেকেই। অতীতে উচ্চ আদালতে কর্মরত আইনজীবী ও সাংবদিকদের ওপর নির্বিচারে পুলিশের এমন হামলা নজিরবিহীন ও কলঙ্কজনক বলে মত তাদের।

এদিকে, গতকাল রাতে এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান এ ঘটনায় বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় একশ আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। এতে প্রাণনাশের হুমকি, ভাঙচুর, ব্যালট পেপার চুরি, প্রায় ৪ লাখ টাকার নির্বাচনী আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নিয়ে গতকাল এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবী নেতারা। পরে সমিতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করা হয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা, সাবেক বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুরুল হক চৌধুরীকে। তার নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করেন। একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ভোট গণনার মেশিন ব্যবহার করতে চাইলে সমিতির বর্তমান সম্পাদক ও আওয়ামী ফোরামের সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল তাতে বাধা দেন। তিনি আলাদা ব্যালট পেপার তৈরি করে আনেন। এ নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৩ মার্চ বিকেলে প্রার্থী পরিচিতি সভার পর সন্ধ্যায় অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করেন।

এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার বিএনপি ও আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা ফের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন। সমিতির আওয়ামী ফোরামের নেতারা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামানকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থকরা সমিতির সাবেক সহসভাপতি এএসএম মোক্তার কবিরকে প্রধান করে একটি নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠন করেন। বিষয়টি নিয়ে দিনভর দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবীর ভাষ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যালট পেপারে সই করতে সমিতির তিনতলার সম্মেলন কক্ষে যান। এতে আপত্তি জানান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ সময় দুপক্ষের হট্টগোলের মধ্যে প্রায় তিন হাজার ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়ে যায়। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হৈচৈ ও হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ফলে গতকাল সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হবে কিনা, তা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। আর সমিতির সম্পাদক ও এবারের ভোটের আওয়ামী লীগ ফোরামের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলালের ভূমিকার কারণেই গতকালের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। তার এ ঘটনায় বিব্রত অনেক সিনিয়র আইনজীবীও।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সকালে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রায় পাঁচ শতাধিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করতে দেখা যায়। সকাল ৭টা থেকেই আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা সমিতি প্রাঙ্গণে হাজির হন। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরাও সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন নতুন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে। অন্যদিকে সকাল ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাদের মনোনীত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সমিতির অডিটোরিয়ামে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরুর উদ্যোগ নেয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদে 

যেসব জেলায় শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা

‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার’

গাজীপুরে তীব্র দাবদাহে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আরও একজনের নাম যুক্ত হচ্ছে

বিআরটিএ’র অভিযানে ৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা জরিমানা 

ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হয়নি : রেলমন্ত্রী

সবাইকে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান মহানগর বিএনপির

ব্যাংককে নেওয়া হলো বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে

বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

১০

বিএনপির আরেক নেতা বহিষ্কার

১১

নদীতে মিলল ছাত্রলীগ নেতার পচাগলা মরদেহ

১২

আমেরিকার কত ট্যাঙ্ক অক্ষত আছে ইউক্রেনে?

১৩

অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ

১৪

এমপি একরামুলকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জেলা আ.লীগের

১৫

সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বেসুরো বাঁশি বাজাচ্ছে : এবি পার্টি

১৬

যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন

১৭

রাজনীতিতে দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে আ.লীগ : ইসলামী আন্দোলন

১৮

ব্রিজের মুখ বন্ধ / হাজার বিঘা জমির পানি নিষ্কাষণে শঙ্কা

১৯

ব্যাংক একীভূতকরণ দায়মুক্তির নতুন মুখোশ : টিআইবি

২০
*/ ?>
X