
২০২২ সালজুড়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অব্যাহত ছিল। গত সোমবার প্রকাশিত ২০২২ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। ওই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি বার্ষিক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে হিন্দুবিরোধী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে দুর্গাপূজা উদযাপন ঘিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছিল সরকার। ফলে সে বছর বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়াই এ ধর্মীয় উৎসব উদযাপিত হয়। তবে সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর দাবি, ২০২১ সালের ওই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এ ছাড়া একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে গত বছরের জুলাইয়ে নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর হিন্দু নেতারা অভিযোগ করেন, তাদের রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে।
দেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর অভিযোগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মিথ্যা মামলা ও জামিন না দিয়ে বেআইনিভাবে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলছেন, এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংখ্যালঘুদের জমি দখল থেকে তাদের রক্ষা করেনি সরকার।
বাংলাদেশে কাজ করা এসব সংগঠনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বছরজুড়েই এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভূমিকা রেখেছে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রায়ই ভাইরাল হয়েছে। এর জেরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে গত বছর বাংলাদেশে সংঘটিত ধর্মীয় স্বাধীনতা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়। এতে ফ্রিডম হাউসের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোয় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব এখনো কম। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর নারী-পুরুষরা আইনের আওতায় বৈষম্যের পাশাপাশি হয়রানি ও অধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইস্যুতে কিছু দেশ উন্নতি করেছে। তবে বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার উন্নতিতে আরও অনেক কাজ বাকি।