ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ২ বছরের জেল ও লোকসভার সদস্য পদ বাতিল হওয়ার ঘটনায় দেশটির রাজনীতির অঙ্গনে চলছে ব্যাপক তোলপাড়। সবার মাথায় একটি বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে— এরপর কী হবে, রাহুলের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী? উচ্চ আদালতে আপিল করে সাজা থেকে নিষ্কৃতি পাবেন কি তিনি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, তিনি রাজনীতির মাঠে ভীষণ চাপে পড়ছেন; কিন্তু না—এতকিছুর পরও নিজ অবস্থানে অনড় রইলেন তিনি। বললেন, লন্ডনে সম্প্রতি করা মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন না। গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কেরালার ওয়ানাড়ের সদ্য সাবেক এমপি রাহুল বলেন, আমার পরবর্তী বক্তব্য কী হবে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) ভীত হওয়ার কারণে আমাকে (পার্লামেন্টে) অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আমি তার চোখে ভয় দেখেছি। এ কারণে তারা আমাকে পার্লামেন্টে কথা বলতে দিতে চায় না। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
রাহুলকে বলা হয় ভারতীয় রাজনীতির রাজপুত্র। ভারত তথা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম তার। বাবা রাজীব গান্ধী, দাদি ইন্দিরা গান্ধী এবং প্রমাতামহ জওহরলাল নেহরু ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে হয়তো নিজ অবস্থান থেকে এক চুলও নড়লেন না তিনি। রাহুলের এমপি পদ বাতিলের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার বিভিন্ন রাজ্যে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায় কংগ্রেসের কর্মী ও সমর্থকরা।
চলতি মাসের শুরুতে লন্ডনে ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (আইজিএ) সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় রাহুল বলেন, বিজেপি ভারতীয়দের মুখ বন্ধ করে রাখতে চায়। ওই সময় গুজরাট দাঙ্গা ও নরেন্দ্র মোদির উত্থান নিয়ে নির্মিত বিবিসির ডকুমেন্টারির বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের সর্বত্র কণ্ঠস্বর দমন হচ্ছে, যার একটি উদাহরণ হলো বিবিসির ডকুমেন্টারি। ওই ডকুমেন্টারিটি ভারতে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে বিজেপি সরকার।
লন্ডনে ওই বক্তব্যের জেরে তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। এ নিয়ে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম সাভারকার নয়; আমি একজন গান্ধী। আমি ক্ষমা চাইব না। মোদি-আদানির সম্পর্ক পুরোনো। মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে আদানির সঙ্গে পরিচয় হয়। এই আদানির সংস্থায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কার টাকা? আদানি ইস্যুতে মুখ খোলাতেই আমার কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। বিমানবন্দর তুলে দেওয়া হয়েছে আদানির হাতে। বারবার স্পিকারকে চিঠি লিখেও কোনো উত্তর পাইনি। রাহুল আরও বলেন, দেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চলবে। আমি প্রশ্ন করা বন্ধ করব না। আমাকে আটকানো যাবে না। প্রতিদিন গণতন্ত্র আক্রান্ত হচ্ছে। পার্লামেন্টে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমাকে যদি সারাজীবনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, তাহলেও আমি লড়াই চালিয়ে যাব। এ সময় তার এমপি পদ বাতিল নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর জন্য সব বিরোধী দলের প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি। বলেন, আমরা একজোট হয়ে কাজ করব।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রচারের সময় নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেন রাহুল। সে সময় তিনি বলেছিলেন, সব মোদি কেন চোর হয়? ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া মানহানির মামলায় গত বৃহস্পতিবার তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর পরদিনই (শুক্রবার) কংগ্রেসের এ সাবেক সভাপতিকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।