নাসিরনগরে মন্দিরে হামলার প্রথম রায়ে ১৩ জনের কারাদণ্ড

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফেসবুকে ‘ভুয়া আইডি খুলে’ সাম্প্রদায়িক উসকানি ছড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছিল প্রায় ছয় বছর আগে। সেই ঘটনায় করা এক মামলায় ১৩ আসামিকে চার বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও দুই মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ পারভেজের আদালত এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, হরিপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁকি, মোখলেছ মিয়া, মো. মফিজুল হক, খসরু মিয়া, নাজির রহমান, মো. মাফুজ মিয়া, ইদন মিয়া, শেখ মো. আব্দুল আহাদ, সায়হাম রাব্বি শ্যাম, মীর কাসেম, আনিস মিয়া, তাবারক রেজা, সজীব চৌধুরী। এর মধ্যে ৫ জন পলাতক রয়েছেন। বাকিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে ছিলেন।

ফেসবুক পোস্টের জেরে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর সদরের ১৫টি মন্দির ও অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় বারোয়ারি মন্দিরের পুরোহিতসহ দুই ব্যক্তি ও পুলিশ সব মিলিয়ে আটটি মামলা করে। এর মধ্যে গতকাল উপজেলা সদরের পশ্চিমপাড়ার পুরোনো দুর্গামন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলার রায় এলো। মামলাটি করেছিলেন নাসিরনগর থানার তৎকালীন এসআই সাধন কান্তি চৌধুরী। দীর্ঘ তদন্তের পর দণ্ডপ্রাপ্ত ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রায়ে অসন্তোষ আসামিপক্ষ

এদিকে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী কামরুজ্জামান মামুন। তিনি বলেন, যে কোনো মামলার সাজা দিতে ন্যূনতম সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রয়োজন; কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণহীন এই মামলায় ১৩ জনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে আপিল করে ন্যায়বিচার পাব।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর নাজমুল হোসেন বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিচার বিশ্লেষণ করেই রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জেলে রসরাজ দাসের ফেসবুক আইডি থেকে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ২৯ অক্টোবর স্থানীয়রা তাকে পুলিশে সোপর্দ করে। পোস্টের জেরে ৩০ অক্টোবর উত্তেজিতরা বিভিন্ন হিন্দু মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা চালায়। পরে জানা যায়, রসরাজ একজন জেলে, যার অক্ষরজ্ঞান নেই, স্মার্টফোনও চালাতে পারেন না। এর মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তকারীরা জানতে পারেন ওই ছবি সম্পাদনা করা হয়েছিল হরিণবেড় বাজারে আল আমিন সাইবার পয়েন্ট অ্যান্ড স্টুডিও থেকে, যার মালিক জাহাঙ্গীর আলম। গত বছরের ২৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর তা স্বীকার করেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com