পিটার হাসের বাসায় আ.লীগ বিএনপি ও জাপার নেতারা

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে এক টেবিলে বসলেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য ঘোষিত ভিসা নীতি এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়, প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান মো. এ আরাফাত, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল উপস্থিত ছিলেন।

পরে বৈঠকের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এক বার্তায় বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন ব্যক্তিদের ভিসা সীমিত করার এই নতুন ভিসা নীতি সবার জন্য প্রযোজ্য।’ এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সেলিম মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়েই কথা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট কোনো দলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন ভিসা নীতি নয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন দেখতে চায়। এখানে বিএনপিও তাদের কথা বলেছে, আমরাও বলেছি, জাতীয় পার্টিও বলেছে।

আওয়ামী লীগ সূত্র আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতির মাধ্যমে বিএনপির তিনটি বিষয় নাকচ হয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিএনপির দাবি বাতিল হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, সে দাবিও এই ভিসা নীতির পর অমূলক দাবিতে পরিণত হলো। সেইসঙ্গে বিএনপি আগামী নির্বাচনে না এলে যে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, সে ধরনের কোনো কিছু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করে না।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন সরকার বাংলাদেশের জন্য যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে চেয়েছে। প্রতিটি দলই তাদের মতামত দিয়েছে। নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একদল আরেক দলের সম্পর্কে বলেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির উদ্দেশ্য বোঝা গেছে, তারা একটা ফেয়ার ইলেকশন চায় এবং নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। এ ব্যাপারে আমাদের দলও একমত। আমরা বলেছি, মার্কিন সরকার যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, যারা এ ধরনের কাজ করবে, ইলেকশন আনফেয়ার করার জন্য জোর-জবরদস্তি করবে, সে যেই হোক—মার্কিন সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়, ভিসার বিষয়ে সেটা সেই গভর্নমেন্টের বিষয়। 

বিএনপির আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা—তারই প্রতিফলন মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা। যারাই ভোট চুরির সঙ্গে ডিরেক্ট এবং ইনডিরেক্ট জড়িত, তাদের সবার জন্যই এটি প্রযোজ্য। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বর্তমানে অলরেডি ভোট চুরি চলছে, এটিকে নির্বাচন বলে না। এ পদক্ষেপ আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। গাজীপুরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, লেভেল প্লেইং ফিল্ড না থাকায় সাবেক মেয়রকে নির্বাচন করতে দেয়নি বর্তমান সরকার।

আমীর খসরু আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই মেসেজ নিয়ে আওয়ামী লীগ না ভাবলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com