শেষ পাওয়ার প্লের শুরুতে এবাদত হোসেনকে বোলিংয়ে আনতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। মাথায় থাকা ক্যাপ খুলে বোলিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবাদত। ঠিক তখনই লং অফে ফিল্ডিং করা সাকিব আল হাসান হাতে থাকা রুমাল তুলে তামিমকে কিছু একটা ইঙ্গিত করলেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক বুঝতে পারলেন না! এবার সাকিব দৌড়ে এলেন। এবাদতের আগে বোলিং করতে চাইলেন। তামিম কোনো প্রশ্ন না করেই বলটা তুলে দিলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডারের হাতে। ওভারের দ্বিতীয় বলেই লেজের ব্যাটার রেহান আহমেদকে ফেরালেন; রেকর্ড বইও ওলটপালট করে দিলেন। প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন, বিশ্ব ক্রিকেটের যা ১৪তম। তবে স্পিনার হিসেবে তিনি ষষ্ঠ। ততক্ষণে হারের দ্বারপ্রান্তে ইংল্যান্ড। পরের ওভারের শেষ বলে পাঁচ হতে পারত সাকিবের। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান জোফরা আর্চার। যদিও পরের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হন শেষ ব্যাটার ক্রিস ওকস। ৫০ রানের কাঙ্ক্ষিত জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল স্বাগতিকেরা। এ জয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগে আরও ১০ পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ।
মিরপুরে সিরিজ ২-০ হেরে চট্টগ্রাম আসা বাংলাদেশের প্রতি আস্থা ছিল না সাগরিকার দর্শকদের। শেষ ম্যাচ ঘিরে তাই নিস্তেজ ছিল টিকিট কাউন্টারগুলো। তবুও বেলা গড়াতে গড়াতে হাজার পাঁচেক দর্শক এসেছিলেন মাঠে। তাদের হতাশ করেননি সাকিব। ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে মাতিয়ে রেখেছিলেন। বাংলাদেশের জয় না দেখা পর্যন্ত মাঠে ছিলেন দর্শকরাও। সাকিবের ৭৫ রানের ইনিংসে ২৪৬ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ; আর চার উইকেট শিকারে ১৯৬ রানে থামে ইংলিশরা।
রানপ্রসবা উইকেটের জন্য চট্টগ্রাম এখন পরিচিত নাম। ডিসেম্বরেই এখানে ৪০৯ রান করেছিল ভারত। ইংল্যান্ড তো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। উইকেট তেমন হলে কাজটা সহজই হতো বাটলারদের। কিন্তু এ ম্যাচের উইকেট যে ভিন্ন হতে যাচ্ছে, ম্যাচের আগের দিনই তা আঁচ করেছিল বাংলাদেশ। তাইতো গতকাল টস জিতে ব্যাটিংটাই বেছে নিলেন অধিনায়ক তামিম। একাদশেও রেখেছিলেন তিন স্পিনার।
প্রতিপক্ষের অধিনায়ক জস বাটলারও নাকি চেয়েছিলেন আগে ব্যাটিং, এমনটাই বলেছিলেন তিনি। স্পিনের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাটিং করা কিছু কঠিন হবে ভেবেই আগে ব্যাটিংয়ের ভাবনা ছিল তামিম-বাটলারের। টস জেতায় নিজেকে ভাগ্যবানও ভাবতে পারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
অবশ্য ইনিংসের শুরুটা ভুলে যেতে চাইবেন তামিমরা। প্রথম ওভারেই স্যাম কুরানে ফেরেন দলের অন্যতম সেরা ব্যাটার লিটন দাস। পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে ব্যর্থ তিনি। ক্যারিয়ারে প্রথম পরপর দুই ব্যাটে রান শূন্য ছিলেন ডানহাতি এ ব্যাটার। গত মৌসুমে দলের সেরা ব্যাটার হওয়া লিটন হয়তো এ সিরিজ ভুলে যেতে চাইবেন এখানেই। সুবিধা করতে পারেননি তামিমও। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশ অধিনায়ককে ১১ রানে ফেরান কুরান।
শুরুর এ ধাক্কা বুঝতে দেননি মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ৯৮ রানের জুটিতে ব্যাটারদের ওপর থেকে সব চাপ নিমিষেই কাটিয়ে দেন তারা। কিন্তু ৫৩ রান করা শান্ত ভুল বোঝাবুঝির রানআউটটা মেনে নিতে পারেননি। নিজের ফেসবুকের কাভারেও তাই হতাশাচ্ছন্ন ছবিটা রেখে দিলেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়া মুশফিক ফেরেন ব্যক্তিগত ৭০ রানে। পরের গল্পটা শুধুই সাকিবের। একপাশে থেকে ৭৫ রানের ইনিংসে দলকে এনে দেন জয়ের পুঁজি। এরপর বোলিংয়েও শুরুটা করেছিলেন তিনি। দারুণ শুরু পাওয়া ইংলিশদের ৫৪ রানের জুটি ভেঙে ফিল সল্টকে (৩৫) রানে ফেরান তিনি। নিজের পরের ওভারে আরেক ওপেনার জেসন রয়কেও ফেরান তিনি।
চতুর্থ উইকেটে কুরান ও ভিন্সের মধ্যে দারুণ এক জুটি হয়। মেহেদী হাসান মিরাজের সৌজন্যে ৪৯ রানের জুটি ভেঙে ফেরেন কুরান (২৩)। ৩৮ রান করা ভিন্সকে তো বল চেয়ে নিয়েই মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করেন তিনি। শেষের দিকে তাইজুল-এবাদতের সম্মিলিত বোলিংয়ে জয়ের স্বপ্ন জাগ্রত হয় বাংলাদেশের। রেহানকে নিজের চতুর্থ শিকার বানিয়ে সে স্বপ্নের পথ সহজ করে দেন সাকিব নিজেই। শেষটা করেন সিরিজের নিষ্প্রাণ বোলার মুস্তাফিজুর রহমান।