ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে শিশু বিক্রি

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে শিশু বিক্রি

আম কিনে দেওয়ার কথা বলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে অপহরণ করা হয় তিন বছরের শিশু সিদ্দিককে। এরপর তাকে বিক্রির জন্য ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয় অপহরণকারী চক্র। স্ট্যাম্প করে শিশুটির নাম বদলে রাখা হয় প্রণীল পাল। এক পর্যায়ে ২ লাখ টাকায় বিক্রিও করে দেওয়া হয় সিদ্দিককে। অপহরণের ২২ দিন পর গোপালগঞ্জ থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-২। আর এ ঘটনায় ঢাকা ও গোপালগঞ্জে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা পীযূষ দম্পতি ও শিশুটির ক্রেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল, সুজন সুতার, পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান।

তিনি বলেন, গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা উদ্যানের মনির মিয়ার বাজার এলাকায় দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়ে হুমায়রা ও তার ছোট ছেলে সিদ্দিকসহ কয়েকটি শিশু খেলা করছিল। এ সময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাদের চকলেট খাওয়ায়। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি হুমায়রাকে বলে, তুমি বাসায় চলে যাও, আমি তোমার ভাইকে বাজার থেকে আম কিনে দেব। এ সময় হুমায়রা ভাইকে ছেড়ে বাসায় যেতে না চাইলে তাকে ধমক দেয় ওই ব্যক্তি। পরে সিদ্দিককে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায় সে। এদিকে হুমায়রা কান্নাকাটি করতে করতে বাসায় পৌঁছে মাকে পুরো ঘটনা জানালে তৎক্ষণাৎ তিনি ও তার স্বামী সিদ্দিককে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তার কোনো সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করেন তারা।

এ র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ২৯ এপ্রিল অপহৃত শিশুটির বাবা মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ও র্যাব-২-এর কার্যালয়ে একটি অভিযোগও দেন। এর ভিত্তিতে তদন্তে নেমে র্যাব জানতে পারে, অপহরণকারী ব্যক্তি পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। তারা সুজন সুতার আরেকজনের মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছে ২ লাখ টাকায় সিদ্দিককে বিক্রি করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রথমে সুজনকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার তাড়াসি গ্রামে অভিযান চালিয়ে পল্লব-বেবী দম্পতির কাছ থেকে সিদ্দিককে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকার সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পীযূষ ও রিদ্ধিতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে পীযূষ-রিদ্ধিতা দম্পতি জানান, তারা ফেসবুকে ‘সনাতনী উদ্যোক্তা ফোরাম’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলেন। ওই গ্রুপের মাধ্যমে সুজনের সঙ্গে রিদ্ধিতার পরিচয় হয়।

আনোয়ার হোসেন খান জানান, সিদ্দিককে অপহরণের পর ওই দিনই রিদ্ধিতা সুজনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে। আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনের সামনে একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে রিদ্ধিতা নিজেকে অর্পণা দাস ও পীযূষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দেন। শিশু সিদ্দিককে প্রণীল পাল নাম দিয়ে স্ট্যাম্প করে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে সুজনের কাছে বিক্রি করে দেন। প্রমাণস্বরূপ প্রণীল পালের টিকা কার্ড, রিদ্ধিতা পালের জন্মসনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রদান করেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com