
৯২ মাইল গতির বলে আফিফ হোসেন ধ্রুবর স্টাম্প ভাঙলেন জোফরা আর্চার। বেলস উড়ে গিয়ে পড়ে লংস্টপে—তাতে বাংলাদেশের আয়ত্তে থাকা ম্যাচ উড়ে যাওয়ার উপক্রম! ওই ওভার শেষে ১২ বলে বাংলাদেশের লক্ষ্য ১৩ রান, উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাসকিন আহমেদ। টি-টোয়েন্টিতে লক্ষ্যটা ছোট মনে হলেও মিরপুরের মৃত্যুকূপে তা বেশ কঠিন। কিন্তু ক্রিস জর্ডানকে কাভার দিয়ে তাসকিনের দুটি বাউন্ডারিতে উড়ে গেছে সব শঙ্কা। বাংলাদেশের অর্জনের মুকুটে যোগ হলো নতুন পালক—বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।
অন্যপ্রান্ত থেকে বাতাসে ঘুসি মারতে মারতে দৌড়ে এসে উদযাপনে যোগ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ডাগআউটে থাকা কোচিং স্টাফের সদস্যরা আলিঙ্গনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় উদযাপন করেছেন। ৪ উইকেটের জয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ নিশ্চিত সাকিব আল হাসানদের। ইংলিশদের ১১৮ রানের চ্যালেঞ্জ এক ওভার বাকি রেখেই পেরিয়ে যায় স্বাগতিকরা। চট্টগ্রামে এগিয়ে থাকায় হয়তো নির্ভার ছিল বাংলাদেশ। মিরপুরের ‘মৃত্যুকূপে’ ইংল্যান্ড ব্যাটাররা কতটুকু কী করতে পারবেন, তা আগে
থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিল। ৪ ব্যাটার নিয়ে একাদশ সাজানো ইংল্যান্ড বেশিদূর যেতে পারেনি। আসলে যেতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ১১৭ রানে ইংলিশদের আটকে রাখায় নেতৃত্ব দিয়েছেন এ অলরাউন্ডার। নাজমুলের অপরাজিত ৪৬ রানে সিরিজ নিশ্চিত করে ‘পুষ্পের হাসি’ হেসেছেন সাকিবরা।
সিরিজ জেতার পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে দশে ‘১০’ দিতে হবে। চট্টগ্রামে স্পোর্টিং উইকেটে যখন দল এগিয়ে যায়, তখন মিরপুর তো উদযাপনের মঞ্চই হয়ে থাকার কথা। মিরাজ-নাজমুলের কল্যাণে ২০ ওভারের সংস্করণে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর বিপক্ষে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের পর এবার ইংল্যান্ডকেও হারাল টাইগাররা।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার। অথচ বিকেল ৩টা বাজতেই মিরপুরের গ্যালারি কানায় কানায় পরিপূর্ণ। ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতেই হয়তো সাধারণ দর্শকদের এমন ছুটে আসা। তাদের নিরাশ করেননি সাকিব-নাজমুলরাও। ডাক-ঢোল পিটিয়ে উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তারা।
প্রথম ম্যাচের পর গতকালও টস ভাগ্যে জিতে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। উইকেট বুঝতে না পেরে লক্ষ্য তাড়া করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পিচ রিপোর্টে অবশ্য স্পিনারদের এগিয়ে রাখা হয়েছিল, স্কোরও ১২৬-১৪৪ এর মধ্যে ধারণা করা হয়েছিল। সেখানে মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে আরও কম রানে আটকে গেছে ইংল্যান্ড, যার শুরুটা করেছিলেন তাসকিন। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে দাউদ মালানকে (৫) হাসান মাহমুদের ক্যাচে ফেরান ডানহাতি পেসার। তখন গ্যালারিতে বসে তার ছেলেই বাবার সঙ্গে উদযাপন করেন।
সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে তৃতীয় বলে ফিল সল্টকে (২৫) ফেরান সাকিব; নিয়েছেন দারুণ এক রিটার্ন ক্যাচ। প্রথম ম্যাচের মতো গতকালও হাসান মাহমুদে বন্দি হন জস বাটলার। পরের গল্পটা ছিল মিরাজের। ৪ ম্যাচ পর একাদশে সুযোগ পেয়েই মঈন আলি, স্যাম কারেন, ক্রিস ওকস ও ক্রিস জর্ডানকে শিকার করেন তিনি। ৪ ওভারে ১২ রানে ৪ উইকেট—বল হাতে ক্যারিয়ারসেরা দিন কাটান এ স্পিনার।
বোলারদের নৈপুণ্যে ব্যাটারদের লক্ষ্য ছোটই মনে হয়েছে বটে! ইংল্যান্ডের ব্যাটিং দেখে বোঝা গেছে কাজটা একেবারে সহজ হবে না। হয়েছেও তাই, ৫৬ রান তুলতেই ফেরেন লিটন-রনি-তৌহিদ। চাপে পড়া দলকে টেনে তোলেন নাজমুল-মিরাজ। ৪১ রানের জুটি ভেঙে মিরাজকে (২০) ফেরান জোফরা আর্চার। সাকিব ও আফিফ ফেরার পর ম্যাচটা কঠিনই মনে হচ্ছিল। ১২ বলে প্রয়োজন ১৩ রান—উইকেটে নাজমুল ও তাসকিন। বিশেষজ্ঞ ফিল্ডার হয়ে থাকা জর্ডানকে ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আনেন বাটলার। জর্ডান যা করেছেন, তাতে বাটলার হতাশই হবেন নিশ্চয়ই। ৬ বলেই ১৩ রান দিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন তিনি। বাংলাদেশ পায় কাঙ্ক্ষিত সেই সিরিজ জয়।