সুশোভন অর্ক
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মদের হোম ডেলিভারি দিতেন সেই নাফিজ

মদের হোম ডেলিভারি দিতেন সেই নাফিজ

কখনো ফেসবুক পেজ খুলে, আবার কখনো নিজের আইডি থেকে প্রকাশ্যে মদ এবং অন্যান্য মাদক বিক্রি করে আসছিলেন নাফিজ মো. আলম। একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হতেন অনায়াসে। কাউকে তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যেতেন অনলাইনে মাদকের কারবার। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হোম ডেলিভারি দিচ্ছিলেন বিজ্ঞাপন দিয়ে। ফেসবুক এবং টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলে গড়ে তুলেছেন বিশাল ক্রেতা।

তার পরিচালিত মাদক কারবারের ফেসবুক গ্রুপের নাম ‘সিন্ডিকেট ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা।’ এ ছাড়াও ‘সিন্ডিকেট প্রাইস আপডেট’ নামে টেলিগ্রামে রয়েছে একটি ক্লোজড গ্রুপ। যেখানে প্রতিদিনই দেওয়া হচ্ছে মাদকের হোম ডেলিভারির আপডেট। এমনকি রমজান মাসে মদ বিক্রির ওপর ডিসকাউন্টও দেন এই নাফিজ।

ফেসবুকে নাফিজ নিজেই পরিচয় দেন বিচারপতির ছেলে তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে দেখা যায় নাফিজের বাবার নাম মো. রফিকুল আলম। নিজেকে তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবেও পরিচয় দেন। ছাত্রদলের নানা অ্যাকটিভিটি তার ফেসবুকজুড়ে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাফিজ তার সিন্ডিকেট গ্রুপের মাধ্যমে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা আবাসিক, মহাখালী, মিরপুর ১০ নাম্বার, ইসিবি চত্বর, বারিধারা, নিকেতন, নিকুঞ্জ, খিলক্ষেত, উত্তরা, ধানমন্ডি, মগবাজার, শ্যামলী, ইস্কাটন, ফার্মগেট, খিলগাঁও, বনশ্রী এবং রামপুরা টিভি ভবন এলাকায় মাদক ডেলিভারি দেন। অন্যান্য এলাকার লোকজন এসব এলাকা থেকে ডেলিভারি নেন। নাফিজ তার ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে মাদকের বিষয়ে বর্ণনা

করে সেগুলো বিক্রি করেন । বিভিন্ন ব্যান্ডের বিদেশি মদ, বিয়ার, গাঁজা এবং মাদক ব্রাউনি বিক্রি করেন তিনি। এসবের বিভিন্ন দাম এবং হোম ডেলিভারি কীভাবে দিতে হবে সে বিষয়ে লাইভে এসে ব্যাখ্যা করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিরস্কার এবং কটাক্ষ করে মাদক বিক্রি চালিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ করে আসছিলেন তিনি। এর ভিডিও চিত্র রয়েছে কালবেলার কাছে।

অবশ্য ছাড় পাননি অনলাইনে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করা এই তরুণ। গত রোববার রাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। বাসা থেকে অবৈধ বিদেশি মদ, বিয়ার, মাদক গ্রহণের সরঞ্জাম ও পুলিশের স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। তখন তার এক বান্ধবীকেও আটক করা হয়। ওই সময় নাফিজের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল র্যাব। এ ছাড়া নাফিজের কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত ওয়াকিটকি, পুলিশের ক্যাপ, ব্যাজসহ দুটি খেলনা পিস্তল উদ্ধারের কথাও জানায় বাহিনীটি। পরে নাফিজের বাবার প্রভাবে কারাগার থেকে বের হয়ে যান তিনি। ফের শুরু করেছিলেন অনলাইনে মাদকের কারবার।

নাফিজের মাদক কারবারের প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেটের বার্তা হচ্ছে—‘আমরা সবচেয়ে অল্প দামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ বিক্রি করি। কেন লস দিয়ে এসব মদ বিক্রি করছি সেটা আমাদের কাস্টমারদের সবার একটা প্রশ্ন। অনেকে মনে করছেন সেটা ভেজাল মদ। কিন্তু যারা নিয়েছেন তারা জানেন আমাদের মদে কোনো ভেজাল নেই। আমরা আসলে এখানে মদ বিক্রি করতে আসিনি। আমরা এসেছি ভালোবাসার সিন্ডিকেট করতে।’

এই সিন্ডিকেটের ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন সময় কাস্টমারদের রিভিউ পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে অনেকেই মদ ডেলিভারি পেয়ে সিন্ডিকেট গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান। আবার অনেকেই গাঁজার মানের প্রশংসা করে নাফিজকে ধন্যবাদ দিয়ে পোস্ট দেন। ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপটিতে হটলাইন নম্বর এবং বিদেশি নম্বর দিয়ে খোলা হোয়াটসঅ্যাপ আইডির ঠিকানা দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সিন্ডিকেটের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ রয়েছে। যেটি নিয়ন্ত্রণ করেন নাফিজ নিজেই। এই গ্রুপে প্রায় ৪ হাজার সদস্য রয়েছেন, যারা নাফিজের নিয়মিত ক্রেতা। সেখানে নাফিজ বার্তা দিয়েছেন, আমাকে অবশ্যই অর্ডারের সময় ফুল পেমেন্ট করতে হবে। কেউ বলবেন না, অর্ধেক প্রথমে দেবো, আর বাকি অর্ধেক পরে। এসব বলে আমার সময় নষ্ট করবেন না। গ্রুপে যে মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরটি দেওয়া আছে সেখানে টাকা পাঠিয়ে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে আপনাদের নাম ও নগদের শেষের ৫টি নম্বর পাঠাতে হবে। অর্ডার করার ৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারি পেয়ে যাবেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ) সহকারী পরিচালক সুব্রত সরকার শুভ কালবেলাকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর বিধান অনুসারে অনলাইনে কিংবা অফলাইনে আলকোহল বিক্রির কোনো প্রচেষ্টা অথবা উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থ বিনিয়োগ, কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরিচালনা, তার পৃষ্ঠপোষকতা, কিংবা মিথ্যা ঘোষণা আইনত দণ্ডনীয়। অনলাইনে মদ বিক্রির সিন্ডিকেট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই চলমান। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বাকিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

একদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন জানান, রোববার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারি নাফিজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলাও রয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নাফিজের বিরুদ্ধে আগেও মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। তা ছাড়া তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনেও মামলা রয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর নাফিজকে গতকাল আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন এমডি ও সিইও মোহাম্মদ আবু জাফর

খুলনার আকাশে ‘গোলাপি চাঁদ’

শুভ জন্মদিন ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ শচীন

সরকারি জায়গা দখল করে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা

এক বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর

মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা, আ.লীগ নেতার মৃত্যু

বিআরটিএর অভিযানে ৪০৪ মামলায় ৯ লাখ টাকা জরিমানা

আরও তিন লক্ষাধিক হোটেল কক্ষ বানাবে সৌদি আরব

ঈদযাত্রায় সড়কে গড়ে দিনে ২৪ জনের প্রাণহানি

শান্ত-মিরাজদের প্রস্তুতি ক্যাম্পে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ

১০

তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন 

১১

লেবাননের ৪০ স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা

১২

ঢাবিতে ফরেনসিক সায়েন্স ও সাইকোলজিবিষয়ক কর্মশালা

১৩

আকর্ষণীয় বেতনে ইডকলে চাকরির সুযোগ

১৪

কমলা রঙের মেঘে ঢেকে গেছে গ্রিসের আকাশ

১৫

বৃষ্টির আশায় দেশজুড়ে চলছে যত আয়োজন

১৬

সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬

১৭

বিএনপির ৫ নেতা বহিষ্কার

১৮

পরবর্তী কোচ হিসেবে স্লটকে পছন্দ লিভারপুলের

১৯

কোড সামুরাই হ্যাকাথনের দ্বিতীয় পর্বের ফল প্রকাশ, ৪৬ দল নির্বাচিত

২০
*/ ?>
X