
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জ্বালানি তেলের ওপর বিদ্যমান কর কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ১৩টি এইচএস কোডে আমদানি করা জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে জ্বালানি তেলের ওপর ৩৪ শতাংশ করারোপ করা আছে। আগামী বাজেটে এই হার ২৯ শতাংশে নামবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূ্ত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে আগামী বাজেটে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ১৩টি এইচএস কোডের পণ্যের ওপর অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বিদ্যমান কর ব্যবস্থায় জ্বালানি তেল আমদানি করলে ১০ শতাংশ শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশ মিলে ৩৪ শতাংশ সরকারি শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই শুল্কহার আর থাকছে না। এর মধ্যে বিদ্যমান অগ্রিম কর প্রত্যাহার হচ্ছে। এ ছাড়াও ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর অব্যাহতির বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে আগামী বাজেটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা স্বাভাবিক হলেও আগের তুলনায় অনেক বেশি। সরকার জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিলেও গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির জেরে দেশেও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়। আগামী অর্থবছর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক দিয়ে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। জ্বালানি তেলের মূল্যের সঙ্গে যেহেতু সবকিছুর সরাসরি একটি প্রভাব রয়েছে, তাই এ খাতে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। অগ্রিম কর প্রত্যাহার হলে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় কিছুটা হলেও কমবে।
জানা গেছে, পেট্রোলিয়াম তেল, ক্রুড তেল, এইচবিওসি টাইপের মোটর স্পিরিট, এভিয়েশন স্পিরিটসহ অন্যান্য স্পিরিট, জেট ফুয়েলের স্পিরিট, সাদা স্পিরিট, ন্যাপথা, জেট ফুয়েলের কেরোসিন টাইপের জেপি-১, জেপি-৪সহ অন্যান্য ফুয়েল, অন্যান্য কেরোসিন, হালকা ডিজেল তেল, হাই স্পিড ডিজেল তেল ও ফার্নেস তেলসহ ১৩টি এইচএস কোডের পণ্যের ওপর বিদ্যমান এআইটি অব্যাহতি প্রদান করা হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে ওঠানামার কারণে আমদানিকৃত তেলের শুল্কায়নে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী বাজেটে এই ১৩টি পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ট্যারিফ ভ্যালু ও ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে সরকারের আমদানি ব্যয় যতটুকু কমে, তা দিয়ে একটা স্ট্যাবেলাইজ ফান্ড করার জন্য। যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশে না বাড়িয়ে ওখান থেকে সমন্বয় করা যায়, আর কমলে ওখানে দিয়ে দেওয়া। সে কাজ তো সরকার করে না। অর্থনীতি কীভাবে পরিচালিত হলে মানুষ সুরক্ষা পেতে পারে, তা তো ভাবা হচ্ছে না।’