‘চোখ খুলে দেখি পা বাসের নিচে, পাশে নিথর দেহ’

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবন।
বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবন।ছবি : সংগৃহীত

‘চোখ খুলে দেখি আমার ডান পা একটা বাসের নিচে। পাশে একটি নিথর দেহ। বাসের নিচ থেকে পা বের করার পর গলগল করে রক্ত বের হচ্ছিল। শরীরে আর কোনো অনুভূতি পাচ্ছিলাম না। চারদিকে ইট আর কাচের টুকরার স্তূপ। একটু ধাতস্থ হয়ে গায়ের গেঞ্জি খুলে পায়ে বেঁধে নিই। রক্ত পড়া কিছুটা বন্ধ হলেও তীব্র যন্ত্রণায় দাঁড়াতে পারছিলাম না।’

গত মঙ্গলবার রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন মো. শাকিল। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে কথা বলার সময়ও তিনি আতঙ্কে কাঁপছিলেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তার ডান পায়ের দুটি হাড় ভেঙে আলাদা হয়ে গেছে। মুখ ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শাকিল পুরান ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।

তিনি জানান, সেদিন কলেজ থেকে লালবাগের বাসায় ফেরার জন্য বাসে উঠেছিলেন। রাস্তায় যানজট ছিল। বাস থেকে নেমে ফুটপাতের পাশ দিয়ে হাঁটতে শুরু করেন। তখনই হঠাৎ বিকট এক বিস্ফোরণ। চারদিক থেকে সবকিছু যেন ছুটে আসছিল। ওই মুহূর্তে আর কিছু মনে ছিল না। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখেন পাশেই একটি নিথর দেহ উপুড় হয়ে আছে।

আহত শাকিল বলেন, ‘যে বাসের নিচে আমার পা চলে যায়, সেটি ফুটপাতের পাশে কাত হয়ে ছিল। আমার সঙ্গে দুই বন্ধু ছিল। বিস্ফোরণের সময় ওরা আমার চেয়ে দূরে থাকায় তেমন আঘাত পায়নি। তারাই আমাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে আসে।’

গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ক্যাফে কুইন স্যানিটারি মার্কেট ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশের আরও দুটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে ক্যাফে কুইন মার্কেটের ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হন ভবনটির বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, ক্রেতা, পথচারীসহ দেড় শতাধিক মানুষ।

ওই বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন আরেকজন পল্লব চক্রবর্তী সুমন। তিনি প্রিন্ট ও সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকাটুলীতে। বিস্ফোরিত ভবনটির পাশেই ছিল সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস। পল্লব সেখানে গিয়েছিলেন তার গ্রাহককে স্যাম্পল কুরিয়ার করতে।

গতকাল ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন। এখনো যে বেঁচে আছেন, তা বিশ্বাস হচ্ছে না। কুরিয়ারের কাউন্টারে লম্বা লাইনের পেছনে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন হয়তো। বিস্ফোরণে দেয়াল ভেঙে তাদের ওপরে আছড়ে পড়ে। শব্দে ও আতঙ্কে সবাই তখন মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন। বের হবেন, সেই সাধ্য কারও ছিল না। কুরিয়ার সার্ভিসের দোকানে প্রবেশের রাস্তায় যে কলাপসিবল গেট ছিল, সেটি ভেঙে উল্টে গিয়ে রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। কিন্তু ভবনটির ঠিক পেছনে একটা জানালা পেয়ে বাইরে থাকা লোকজন সেই জানালা ভেঙে তাদের বের করেন।

হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিস্ফোরণের ঘটনায় এমন আহত অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা রাজন ছাড়া বাকিদের সবার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক। তিনি বলেছেন, এখানে মোট ১৫ রোগী ভর্তি রয়েছেন। একজন আইসিইউতে। আর বাকিরা সবাই বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পাঁচজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com