জামায়াতের ‘গোপন বৈঠকে’ সরকারি দুই কর্মকর্তা!

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

রাজধানীর মিরপুরে একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ‘গোপন বৈঠক’ চলাকালে জামায়াত-শিবিরের ৫৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শনিবার রাতে ওই অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন সরকারি কর্মকর্তাও রয়েছেন।

তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপব্যবস্থাপক আবু মাসুম সিদ্দিকী, অন্যজন সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) প্রকল্পের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফাহিম। এ ছাড়া ওই বৈঠক থেকে আব্দুল আজিজ ফারুকী নামে এক ফটো সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। যিনি জামায়তের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের ফটো সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত এবং ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক।

পুলিশের দাবি, স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি ঘিরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর জন্য ওই বৈঠকে মিলিত হয়েছিল জামায়াতের নেতাকর্মীরা। মিরপুর-১-এর ক্যাপিটেল টাওয়ারের ষষ্ঠতলায় ফোর-সি ক্লাসি চায়নিজ অ্যান্ড কনভেনশন কর্নারের কনফারেন্স কক্ষে ওই বৈঠক হয়। সেখান থেকে ৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।

ওই ঘটনায় গতকাল রোববার দারুস সালাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ। ওই মামলায় সরকারি দুই কর্মকর্তাসহ ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে ১০ জনকে এক দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। অপর ৪৮ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ওই অভিযানের পর পুলিশের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন জামায়াতের গ্রেপ্তার ৫৮ জন ছাড়াও পালিয়ে যাওয়া আরও ৩০ থেকে ৪০ জন মিলে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এ বৈঠকের আয়োজন করেছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়।

এজাহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা আবু মাসুম সিদ্দিকী এবং এটুআই প্রকল্পের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফাহিমকে জামায়াতের সক্রিয় সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের পেশাগত পরিচয় বলা হয়নি।

তবে খোঁজ নিয়ে ও পুলিশ সূত্রে ওই দুইজনের পেশাগত পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তা আবু মাসুম সিদ্দিকী বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ক্যাশ বিভাগে কর্মরত। এজাহারে ২০ নম্বর আসামির তালিকায় থাকা এই কর্মকর্তার বাড়ি শেরপুরে। তবে তিনি মিরপুরের জনতা হাউজিং এলাকায় থাকেন।

অপরদিকে এজাহারভুক্ত ৩৬ নম্বর আসামি এটুআই প্রকল্পের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফাহিমের গ্রামের বাড়ি যশোরের চৌগাছায়। তিনি মিরপুরের টোলারবাগে থাকেন। তার বাবা গোলাম মোর্শেদ চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির বলে জানা গেছে।

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে জামায়াতের ১২ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের আমির আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, রোকন সদস্য ফরহাদ হোসেন, আবদুল আজিজ এবং সদস্য মাইনুল ইসলাম তুহিন, মো. জিয়া উদ্দিন, তাজিরুল ইসলামের নামও রয়েছে।

দারুস সালাম থানার ওসি শেখ আমিনুল বাসার বলেন, তারা কাউকে পেশাগত পরিচয় দেখে গ্রেপ্তার করেননি। গোপন বৈঠক থেকে হাতেনাতে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে (একাংশ) গতকাল এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, আব্দুল আজিজ ফারুকী তাদের সদস্য এবং ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অর্থসম্পাদক। তিনি শনিবার রাতে সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। এ আটকের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে (একাংশ) সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন এবং ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম।

এদিকে গতকাল জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, শনিবার মিরপুর থানা পশ্চিম জামায়াতের পক্ষ থেকে ‘ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর’ শীর্ষক আলোচনা সভা চলছিল। সেখান থেকে নেতাকর্মীসহ অর্ধশতাধিক ধর্মপ্রাণ ও সাধারণ মানুষকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তিও দাবি করা হয় ওই বিবৃতিতে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com