অর্থ আত্মসাৎ : ওয়াসা এমডির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ দুদকের

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়।পুরোনো ছবি

ঢাকা ওয়াসার অর্গানোগ্রামে পরিচালক (উন্নয়ন) ও পরিচালক (কারিগর) হিসেবে কোনো পদ নেই। অথচ সেই পদে চুক্তিভিত্তিক নিজের পছন্দের লোক নেওয়া হয়েছে। পরে তাদের ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত বেতন-ভাতা বাবদ ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে জনবল নিয়োগ দিয়ে এ পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এসব অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সুপারিশসহ দুদকে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সংস্থাটির উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তারা সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। এখন কমিশনের অনুমোদন পেলেই এ মামলা করা হবে।

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিলের পর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলার অনুমোদন দিতে ১০-১৫ দিন লাগতে পারে।

দুদকের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে এখনো বহাল আছেন তিনি। বিতর্কিত তাকসিম এ খানের পুনঃনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিধি অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে। ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সংস্থাটির পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা, গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পে ১ হাজার কোটি টাকা, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পে ১ হাজার কোটি টাকা, গুলশান বারিধারা লেক দূষণ প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের

অনুসন্ধান চলছে। এ ছাড়া প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, ঠিকাদার নিয়োগে সিন্ডিকেট, ঘুষ লেনদেন, পছন্দের লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, অপছন্দের লোককে ওএসডি করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ অনুসন্ধান করছেন। এর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক দুজন কর্মকর্তার নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শেষ করে মামলার সুপারিশ তুলে ধরে দুদকে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পরস্পর যোগসাজশ করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত ও ঢাকা ওয়াসায় বৈধ কোনো পদ সৃষ্টি না করে এবং নিয়োগ-সংক্রান্ত নীতিমালা ও প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ না করে নিজেদের পছন্দের দুজন ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তারা হলেন পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আবুল কাসেম ও পরিচালক (কারিগর) একেএম সহিদ উদ্দিন। ২৫২তম বোর্ডসভায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই বোর্ডসভার সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান। আর সাতজন বোর্ড সদস্য ছিলেন, তারা হলেন যথাক্রমে প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, অতিরিক্ত সচিব (অবসর) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এফসিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মু. মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সভাপতি প্রকৌশলী একেএম হামিদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসন-১২-এর কাউন্সিলর আলোয়া সারোয়ার ডেইজি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসিবুর রহমান মানিক। তারা মূলত এ অবৈধ নিয়োগের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তারা অবৈধ নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন পরিচালক অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়ে সুবিধাভোগী হিসেবে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ কারণে বোর্ডসভা ও অবৈধভাবে চাকরি প্রদান ও চাকরি নেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা যেতে পারে। মামলায় বোর্ডের চেয়ারম্যান, প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ সাতজন সদস্য ও চাকরি গ্রহণকারী দুজনসহ মোট ১০ জনকে আসামি করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com