দাম কমানোর উপায় খোঁজেন না হলে বাজার হারাবেন

বিজনেস সামিটে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধিসহ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে নিজেরা নিজেদের বাজার হারাবেন।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) সহযোগিতায় এফবিসিসিআই এই সম্মেলনের আয়োজন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। সমৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করতে হবে যেখানে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। করোনা মহামারির অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলের অবরোধ ও পাল্টা অবরোধ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোকে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রতিজ্ঞা নিতে হবে যে আমরা কোনোমতেই ব্যর্থ হবো না। যে কোনো ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই সফল হবো প্রতিবন্ধকতার উত্তরণ ঘটাতে। কারণ, আমরা আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমাদের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই।

তাই সবার সহযোগিতা আমাদের একান্তভাবে দরকার। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের যাত্রাকে মসৃণ করতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা আসুন, বিনিয়োগ করুন, বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত আপনাদের আগমনের জন্য। বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করেই বিনিয়োগ করুন।

বাংলাদেশ এখন ২০২৬ সাল নাগাদ এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য পাঁচ বছর প্রস্তুতিমূলক সময় পার করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ আমাদের দেশের জন্য একই সঙ্গে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে আবার অনেক চ্যলেঞ্জও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমরা কঠোর বাণিজ্য প্রতিযোগিতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতাও অর্জন করব। আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব সুযোগ কাজে লাগাতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এখানে কোনো হতাশার কথা শুনতে চাই না। এখন থেকে নিজেদের তৈরি করতে হবে। যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে আছে, সেগুলো আমরা মোকাবিলা করব ইনশাআল্লাহ। উত্তরণ-পরবর্তী পরিবেশে চ্যালেঞ্জগুলো মেকাবিলায় তার সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ‘এফডিআই’ এবং স্থানীয় বেসরকারি বিনিয়োগ উভয়ের জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এখন বাংলাদেশের জাতীয় ব্যবসায়িক পরিবেশ কর্মসূচি ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম’ (বিআইসিআইপি) বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় আগামী ৫০ সপ্তাহে ৫০টি সংস্কার এবং আগামী তিন বছরে ১০০টি বিনিয়োগ পরিবেশ সংস্কার করা হবে। যেন ওই লাল ফিতার দৌরাত্ম্য না থাকে, সেটা সরিয়ে দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হবে, সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষ ‘বেজা’ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে।

বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় শক্তিশালী রপ্তানি কৌশল এবং শিল্পনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যা শিল্পের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি চমৎকার নীতি নির্দেশনাও প্রদান করবে।

২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ব্যাপক হারে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছে। এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চায়। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যদি প্রতি বছর গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে আশা করা হচ্ছে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে সক্ষম হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কর্মা দর্জি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত জিয়াংচেন ঝাং, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com