জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩, ০৭:২২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইভিএম মেরামতের টাকা পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন

ইভিএম মেরামতের টাকা পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন

পুরোনো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বিপাকে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অর্থ মন্ত্রণালয় মেরামতের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এসব ইভিএম এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কী পরিমাণ ইভিএম ব্যবহার করা যাবে, সে সিদ্ধান্তও নিতে পারছে না কমিশন। মাত্র পাঁচ বছর আগে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ক্রয়কৃত ইভিএমগুলো সচল করতে এ মুহূর্তে প্রয়োজন আরও ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। চিঠি চালাচালি ও আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পরও এ টাকার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো সায় দেওয়া হচ্ছে না। ফলে আবারও নতুন করে চিঠি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘অকেজো ও নষ্ট ইভিএম মেরামতের প্রস্তাব আমরা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি। এখন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি দেখভাল করছে।’

ইসি সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে উচ্চমূল্যে কেনা ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএমের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ২৫-৩০ হাজার মেশিন সচল রয়েছে। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ও ইসির পরীক্ষায় দেখা যায়, অনেক ইভিএম ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।

ইভিএমের ভেতর পানি ও কাদামাটি জমা আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিকিউরড কানেক্টিং কেবল নেই। ফলে সচল থাকা ইভিএমগুলো দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে শুধু ১৫-২০টি আসনেই ভোট গ্রহণ সম্ভব হবে।

সূত্র আরও জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে কতটি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে, সেটি নির্ধারণ করতে গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জানানো হয়, ইসির সংগ্রহে থাকা ইভিএমগুলো সচল করতে বিএমটিএফের ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার নতুন যে প্রস্তাবনা ছিল, অর্থ মন্ত্রণালয় তাতে সায় দেয়নি। ফলে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়। একই সঙ্গে ইভিএম মেরামতের টাকা চেয়ে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার নতুন ইভিএম প্রকল্প প্রস্তাব সরকার স্থগিতের পর ইসির হাতে থাকা মেশিনগুলোর ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর। কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, কমিশন সব সময় বলে আসছে ৭০ থেকে ৮০টি আসন ইভিএম ব্যবহারের আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তবে কত আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, সেটি নির্ভর করবে ব্যবহারযোগ্য ইভিএম মেশিনের ওপর। সেক্ষেত্রে নষ্ট হওয়া ইভিএমগুলো মেরামত করে জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করতে আপ্রাণ চেষ্টা করব। মোট কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে, তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষেই চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

ইসি সূত্র জানায়, গত সংসদ নির্বাচনের আগে কেএম নূরুল হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম কিনলেও সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। সম্প্রতি নতুন ইভিএম কেনা এবং পুরোনো ইভিএম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনের নেওয়া ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার স্থগিত করে। ফলে হাতে থাকা পুরোনো ইভিএমগুলো সচল রাখতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে আউয়াল কমিশনকে। সমস্যা সমাধানে নতুন করে ইভিএম মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি চালাচালির পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। বৈঠকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে আবারও চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। যে কোনো সময় এ চিঠি দেওয়া হতে পারে।

জানা যায়, আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে কমিশনের হাতে খুব একটা বেশি সময় নেই। আর অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়ের পরও ইভিএমগুলো সচল করতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগবে। ইসির সংগ্রহে থাকা ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএমের মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজারই মেরামত করা লাগবে। এর মধ্যে ৮০ হাজার ইভিএম ভারী এবং ৩০ হাজার ইভিএম হালকা মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে বিএমটিএফ। আর বাকি ৪০ হাজার ইভিএম পুরোপুরি অকেজা হয়ে গেছে। ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা করে কেনা এসব ইভিএমের একেকটি মেরামতেই ব্যয় হবে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। সংকট সমাধান এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঠিক কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে সে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সংস্থাটি।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থারই বৈঠক হয়। আমাদেরও হয়েছে এবং হবে। এ বিষয়ে এখনই জানানোর মতো কোনো অগ্রগতি নেই।’

এর আগে ২০১০ সালের ১৭ জুন যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের প্রচলন শুরু করে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সে সময় তারা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা করে প্রায় সাড়ে ১ হাজার ২০০ ইভিএম তৈরি করে নেয়। ওই কমিশন এই যন্ত্রে ভোট নিয়ে সফলও হয়। পরবর্তীকালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ২০১৫ সালের ১৫ জুন ভোট নিতে গেলে একটি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। সে মেশিনটি পরে আর ঠিক করতে পারেনি কমিশন। ফলে ওই মেশিনগুলো নষ্ট করে নতুন করে আরও উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় রকিব কমিশন। এর পর ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বিএমটিএফ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম ক্রয় করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্যাংককে নেওয়া হলো বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে

বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

বিএনপির আরেক নেতা বহিষ্কার

ছাত্রলীগ নেতার পচাগলা লাশ উদ্ধার

আমেরিকার কত ট্যাঙ্ক অক্ষত আছে ইউক্রেনে?

অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ

এমপি একরামুলকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জেলা আ.লীগের

সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বেসুরো বাঁশি বাজাচ্ছে : এবি পার্টি

যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন

রাজনীতিতে দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে আ.লীগ : ইসলামী আন্দোলন

১০

ব্রিজের মুখ বন্ধ / হাজার বিঘা জমির পানি নিষ্কাষণে শঙ্কা

১১

ব্যাংক একীভূতকরণ দায়মুক্তির নতুন মুখোশ : টিআইবি

১২

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলো

১৩

যুব মহিলা লীগ নেত্রীর বাসা থেকে অপহৃত কিশোরী উদ্ধার

১৪

‘পাকিস্তানের নিরাপত্তাকে নিজের মনে করে ইরান’

১৫

পথ-প্রান্তর রাঙিয়ে তুলেছে রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া

১৬

এসএসসি পাসে মীনা বাজারে চাকরি, আবেদনের বয়স ১৮

১৭

জমি জরিপ নিয়ে নতুন নির্দেশনা ভূমিমন্ত্রীর

১৮

ছাত্রলীগ নেতা লুটে নিচ্ছেন গোমতী নদীর মাটি

১৯

সৌদি আরবে চলচ্চিত্র ছড়িয়ে দিয়েছেন কে এই হানা আল-ওমাইর

২০
*/ ?>
X