সায়েন্সল্যাবে বিস্ফোরণ : অন্য সংস্থায় আটকা পুলিশের তদন্ত

সায়েন্সল্যাব এলাকায় শিরিন ভবনে গত ৫ মার্চ বিস্ফোরণ ঘটে।
সায়েন্সল্যাব এলাকায় শিরিন ভবনে গত ৫ মার্চ বিস্ফোরণ ঘটে।ছবি : কালবেলা

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভবন বিস্ফোরণের পর অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে সায়েন্সল্যাবে শিরিন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা। সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলবে কি না, সে নিয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্য সংস্থার তদন্ত শেষ না হওয়ায় ওই ঘটনার মামলাটির তদন্তও কার্যত থেমে আছে। বিস্ফোরণ ও ভবন ধসের ঘটনায় মামলা হলেও কার গাফিলতি, তা নির্ধারণ হয়নি এখনো। সপ্তাহ পার হলেও ভবনের মালিকপক্ষের কাউকে খুঁজে পায়নি পুলিশ।

এদিকে রমজান ও ঈদের আগে এমন ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন ওই ভবনে থাকা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দোকান খুলতে না পারায় তারা পথে বসতে চলেছেন।

গত ৫ মার্চ রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় তিনতলা শিরিন ম্যানশন ভবনে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনের ওপরের তলার ছাদ ও দেয়াল ধসে পড়ে। তিনজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এর পরদিন ভবনের সামনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এখন পর্যন্ত সেই অবস্থাতেই পুলিশ ভবনটি পাহারা দিচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, তারা ওই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় তা ভেঙে ফেলার জন্য মালিক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন।

ভবনটির দ্বিতীয় তলার দোকান বেস্ট টেইলরের কর্ণধার মো. আব্দুর রশীদ বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও কারও কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যাচ্ছে না। মালিকপক্ষ কিংবা প্রশাসন, কেউই এখন পর্যন্ত কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সামনে রমজান ও ঈদ। এই সময়ে কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এবার কী হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দোকানে কর্মচারী আছে, তাদের ভবিষ্যৎ কী, কিছুই বলতে পারছি না। প্রায় কোটি টাকার জিনিস এখনো ওই ভবনে আছে।’

ভবনের নিচতলায় থাকা মেহেদী-তাশা পাঞ্জাবি দোকানের মালিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখানে আবার ব্যবসা করতে পারব, নাকি ভবনটি ভেঙে ফেলবে, কিছুই জানি না। শুনেছি সিটি করপোরেশন থেকে সিদ্ধান্ত দিলে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কবে সিদ্ধান্ত নেবে আর কবে ব্যবস্থা নেবে, সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আমাদের ব্যবসা তো পথে বসে গেছে।

গতকাল রোববার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর থেকে হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। সামনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করা এএসআই মো. ইউসুফ বলেন, ভবনটি নিয়ে কী করা হবে, সেটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভবনের ভেতরে বিভিন্ন দোকানের মালপত্র রয়েছে। ভবন মালিকরা প্রায়ই আসেন। তাদের বলা হয়েছে, মালপত্র হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তাদের জানানো হবে।

বিস্ফোরণের ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিল। নিউমার্কেট থানার ওসি শফিকুল গণি সাবু কালবেলাকে বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। এই ঘটনার সঙ্গে যেসব সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, আমরা তাদের মতামত গ্রহণ করছি। বিশেষজ্ঞদের মতামত পাওয়ার পর ভবনটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, তারা বিশেষজ্ঞ মতামতের অপেক্ষায় রয়েছেন। সিটি করপোরেশন, রাজউক ও তিতাস কর্তৃপক্ষ ওই বিস্ফোরণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মতামত দেবে। এর ভিত্তিতে কার গাফিলতি ছিল, তা নির্ধারণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে শিরিন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত বেশ কয়েকজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইয়ুব হোসেন বলেন, সায়েন্সল্যাবে বিস্ফোরণের ঘটনায় ছয়জন বার্ন ইউনিটে এবং একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com