বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
আঙ্গুর নাহার মন্টি
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হঠাৎ আলোচনায় ড. ইউনূস

হঠাৎ আলোচনায় ড. ইউনূস

হঠাৎ করেই আবার আলোচনায় শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এই নোবেলজয়ীকে নিয়ে এবার শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, পশ্চিমা বিশ্বও নতুন রাজনীতিতে মেতেছে। এবার ইউনূসের ‘কাজের অবদানের স্বীকৃতি চেয়ে’ এবং ‘হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়ার’ অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি লিখেছেন ৪০ বিশ্বনেতা।

গত মঙ্গলবার এই খোলা চিঠিটি প্রকাশ করে ‘প্রটেক্ট ইউনূস ডট ওয়ার্ড প্রেস ডটকম’। এ ছাড়া চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পূর্ণ পাতার বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়। ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানাও উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষা খাতের বিশ্বনেতাদের তালিকায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন ও প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়র, সংগীতজ্ঞ ও অধিকারকর্মী বোনো; ইউনিসেফের সাবেক উপনির্বাহী পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কুল গৌতম, রকফেলার ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিটার সি গোল্ডমার্ক জুনিয়র, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, বিশ্বব্যাংকের সাবেক ইউএস বোর্ড ডিরেক্টর ও সাউদার্ন ব্যান করপোরেশনের উপদেষ্টা জ্যান পিয়ারসি, অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, বৈশ্বিক নারীবিষয়ক সাবেক মার্কিন অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ মিলেন ভারভির এবং উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলসের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরা।

করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের প্রভাব কাটাতে হিমশিম খেয়েও বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে একের পর এক নানা ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর চাপ মোকাবিলা করে চলেছে। ঠিক সেই সময়ে ড. ইউনূস কি তার বহির্বিশ্বের যোগাযোগের শক্তিতে সরকারকে ফের চাপে ফেলতে চাইছেন? এমন প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কারণ, এর আগেও ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, বিভিন্ন কংগ্রেসম্যান, সিনেটরসহ দেশটির স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ককে ব্যবহার করে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের অপচেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগ তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর ড. ইউনূসের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে হাইকোর্ট তার আবেদনটি খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে সরকারের অবসর দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে সঠিক বলে আদেশ জারি করেন উচ্চ আদালত। বিষয়টি নিয়ে হিলারি ক্লিনটন নিজে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে ইউনূসকে পুনর্বহালের অনুরোধ করেছিলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশের বাইরে সরকারের বা তার কিছু করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা আদালতে বিচারাধীন। এই মামলায় শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ বিতরণ না করে আত্মসাৎ এবং মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করার অভিযোগ রয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ড. ইউনূসের টানাপোড়েন কারও অজানা নয়। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ইউনূস সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রীকে মাইনাস করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন। সেই সময় তিনি গ্রামীণ পার্টি নামে একটি দল গঠনের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। পরে জনমত টানতে না পেরে অবশ্য তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল গঠন তার কাজ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বও ওই সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় ধারা সৃষ্টি করে ইউনূসকে সামনে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। আরও অভিযোগ রয়েছে, ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের অন্যতম কুশীলবও ইউনূস। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ তার ‘শান্তির স্বপ্নে’ গ্রন্থে লিখেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে তাদের প্রথম পছন্দ ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের জানান, স্বল্পকালীন সময়ের জন্য তিনি সরকারপ্রধান হতে রাজি নন, তার ইচ্ছা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা। ওয়ান-ইলেভেনে সংস্কারপন্থি ইউনূসের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সেই টানাপোড়েন আরও তীব্র হয়, যখন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও কার্যক্রমে লবিস্ট হিসেবে কাজ করতে থাকেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, কথিত দুর্নীতির আন্তর্জাতিক অপপ্রচারের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিলের নেপথ্যেও ছিলেন ড. ইউনূস। নোবেলজয়ীর দেশের বিরুদ্ধে এমন সব কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।

এবারের খোলা চিঠিকেও ইউনূসের সরকারবিরোধী তৎপরতা হিসেবে দেখছেন সরকারপন্থিরা। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ইউনূসের সুসম্পর্ক অনেক পুরোনো। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হিলারির পারিবারিক বন্ধু হওয়ার সুবাদে তিনি এর সুফল নিংড়ে নিচ্ছেন আজও। হিলারি ক্লিনটনের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকতে বন্ধুকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাবও দিয়েছিলেন। মাঝখানে ডেমোক্র্যাটদের রিপাবলিকানরা হারিয়ে দিলে বেশ চুপচাপই ছিলেন ইউনূস। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ফের তৎপর হয়ে উঠেছেন তিনি। নেপথ্যে থেকে তিনি কূটনৈতিক যোগাযোগ ও লবিংয়ের মাধ্যমে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে একা ড. ইউনূস কি এতকিছু করে চলেছেন? এর পেছনে থাকা চক্রটি কারা এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া এই চিঠির বিজ্ঞাপনে কারা অর্থের জোগান দিয়েছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এই খোলা চিঠি প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম কালবেলাকে বলেন, নোবেল পাওয়ার পর ড. ইউনূসের কার্যক্রম সবাই অবগত। আওয়ামী লীগ সরকারকে নানাভাবে হয়রানি ও চাপে রাখতে তিনি বারবার অপতৎপরতা চালিয়েছেন। এটাও ব্যতিক্রম নয়। তবে যারা এই খোলা চিঠি লিখেছেন, তাদের সঙ্গে সরকার সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন ফোরামে কথা হয়। তারা সেখানে কখনো বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি বা সরকারপ্রধানকে চিঠিও লেখেননি। অথচ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে খোলা চিঠি দেওয়া হলো। ড. ইউনূসই এর নেপথ্যে রয়েছেন, এটিও স্পষ্ট। তার এরকম কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিত। আর তার কথিত হয়রানির ব্যাপারে বলব, দেশের আইন সবার জন্যই সমান।

তবে এই খোলা চিঠি নিয়ে ভিন্নমত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অভিজ্ঞ কূটনীতিক হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, এটি তো সত্য ড. ইউনূস ইস্যুতে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে এক ধরনের অস্বস্তিতে রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ড. ইউনূসের কার্যক্রম যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি সুপরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাকে নিয়ে বিশ্বপরিমণ্ডলে আগেও কথা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, এই কথাবার্তায় নানা ফ্যাক্টর কাজ করে। তবে সরকারকে সহজ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আন্তর্জাতিক অস্বস্তি নিরসনের মাধ্যমে ইস্যুটির সমাধান করা দরকার। এটা বাংলাদেশ ও সরকার উভয়ের জন্যই ইতিবাচক হবে বলে আমি মনে করি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার চিপকেও ব্যর্থ মোস্তাফিজ

বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন ডা. আতিকুর

চাঁদপুরে টাউন হল মার্কেটে আগুন

নারী বিশ্বকাপের ভেন্যু দেখতে সিলেটে আইসিসির প্রতিনিধি দল

সুদের ওপর কর অব্যাহতি পেল অফশোর ব্যাংকিং

এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় বাচসাস’র নিন্দা

চবিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর

ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রবাসীর স্ত্রী থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

সেতুমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়ায় শাহবাগ থানায় জিডি

পদ্মা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ

১০

আদাবরে স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার, স্বামী পলাতক

১১

ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক

১২

অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি, বিপাকে পুলিশ কনস্টেবল

১৩

গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৮৩

১৪

একাধিক অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল, কে এই তরুণী

১৫

‘পরকীয়ার জেরে’ হত্যা করা হয় মিতুকে : মা

১৬

গাজার সেই শহরে আবারও নারকীয় হামলার ঘোষণা

১৭

রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদে 

১৮

যেসব জেলায় শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা

১৯

‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার’

২০
*/ ?>
X