
বাজারে কখন কোন পণ্যের দাম বাড়ে, সে চিন্তায় দিন কাটছে সব শ্রেণিপেশার মানুষের। সম্প্রতি আলু ও পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর এখন নতুন করে বাড়ছে আদার দাম। মানভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, দেশি ও আমদানি করা প্রতি কেজি আদা মানভেদে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি আলু ৪০ থেকে ৪২ টাকা এবং পেঁয়াজের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির বাজার তথ্য বিষয়ে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন তালুকদার। তিনি কালবেলাকে বলেন, সাধারণ মানের আদার কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। চায়না আদার দাম ৪৫০ টাকার বেশি। বাজারে দেশি আদা থাকলেও আমদানি করা আদার সরবরাহ কম। আজ (গতকাল) শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভিয়েতনাম, মিয়ানমারের আদা ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। চায়না আদার কেজি পাইকারি ৩৫০ টাকা, যা গতকাল (বুধবার) থেকে বেশি। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় পণ্যটির দাম আরও বাড়বে বলে তিনি ধারণা করছেন।
আদার দাম বাড়ার বিষয়ে শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ ও নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ কম থাকায় আদার দাম বাড়ছে। দাম জানতে চাইলে বনলতা মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি কেজি আদা ৩০০ টাকা। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার খুচরা ব্যবসায়ীরা মানভেদে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে আদা বিক্রি করছেন। দাম বাড়ার খবরে কোথাও কোথাও ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
গত বছরের আগস্টে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ৯টি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সর্বশেষ ১৫ দিন আগে খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ৪ মে ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের অজুহাতে লিটারে ১২ টাকা দাম বৃদ্ধি করেন ব্যবসায়ীরা, যা ওই দিন থেকে ১৯৯ টাকা কার্যকর করে তারা। এতে দেখা যাচ্ছে, সরকারের সিদ্ধান্ত না মানলেও নিজেদের সিদ্ধান্ত ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিষয়টিকে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজির পাশাপাশি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান কালবেলাকে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে আমিও চিন্তিত। আমাদের যে অর্থনীতি, সেখানে দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। এর জন্য সরকারকে মাঠে নামতে হবে অর্থাৎ নিজেকে বিদেশ থেকে কম দামে পণ্য কিনে সরবরাহ করতে হবে। অথবা যেসব লোকের হাতে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে, তাদের সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রতিযোগী গড়ে তুলতে হবে। তা করতে না পারলে দাম নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করা দুরূহ ব্যাপার হবে। তিনি বলেন, সরকার এক কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে পণ্য দিচ্ছে, এটা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। আরও বড় আকারে উদ্যোগ নিলে বাজারে প্রভাব পড়তে পারে। যদি বিদেশ থেকে আমদানি করে বাজার সয়লাব করে দেওয়া হয়, তাহলে কোনো ব্যবসায়ী কারসাজি করতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার কয়েকটি নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আদা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, সপ্তাহখানেক আগে একই আদা বিক্রি হয় ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা কেজি দরে। গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি আদার দাম ছিল ৮০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। তবে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, দেশি ও আমদানি করা প্রতি কেজি আদা ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত উৎপাদন, মজুত থাকলেও মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকার আলুর কেজি এখন ৪০ টাকা।
এ ছাড়া ডিমের হলি ৫০ টাকা, সোনালি মুরগির কেজি ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ২০ টাকা কমে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি (হাড়সহ) ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা। ছোট মাছের কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, রুই, কাতলা, (জিয়ল) মাছের কেজি আকারভেদে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। পেঁপের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙা, জালি, পটোল, মুলা, কাঁকরোল, টমেটোর কেজি ৬০ টাকা, গোল (তাল) বেগুন, লতি, করলা, বরবটির কেজি গড়ে ৮০ টাকা। গাজরের কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। সজনে ডাঁটার কেজি ১৪০ টাকা। শাকের আঁটি কিছুটা ছোট হয়ে (পরিমাণ কমে) ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।