দীপু সারোয়ার
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ধনসম্পদের সিপাহসালার কাস্টমসের দুই সিপাহি

ধনসম্পদের সিপাহসালার কাস্টমসের দুই সিপাহি

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে সিপাহি পদে চাকরি করেন তারা। জাতীয় স্কেল অনুযায়ী তাদের বেতন ৯ হাজার থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ২১ হাজার টাকা। এই স্কেলে চাকরি করেই বহুতল ভবন, ডুপ্লেক্স বাড়ি, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক হয়ে চমক দেখিয়েছেন মনোয়ার হোসেন ও মিনু রহমান নয়ন। কাস্টমস গোয়েন্দায় চাকরির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইল এবং অবৈধ পন্থায় আমদানি করা পণ্য নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে এই দুজন বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সিপাহি মনোয়ার হোসেন ও মিনু রহমান নয়ন কাকরাইল ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত। পদ ছোট হলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশীর্বাদ থাকায় কর্মস্থলে প্রবল দাপটের সঙ্গে চলেন তারা। আমদানিকারক ব্যবসায়ী ও আমদানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি করে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন। বৈধভাবে আনার পরও অনেক ক্ষেত্রেই মিনু-মনোয়ার চক্রকে খুশি না করে পণ্য ছাড় করা সম্ভব হয় না। ‘লাগেজ পার্টি’ হিসেবে পরিচিত ঘোষণা না দিয়ে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিকারকদের সহায়ক হিসেবে কাজ করেন এই সিপাহিরা। শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই লাগেজে আসা ইলেকট্রনিক পণ্য, মোবাইল ফোনসেট, পোশাক, প্রসাধন সামগ্রী, ওষুধ, মেডিকেল যন্ত্রাংশ, চামড়ার ব্যাগ, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য বিমানবন্দর থেকে ছাড়ের ব্যবস্থা করে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেন তারা। বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের অবৈধ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থেকে মনোয়ার-মিনু হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক।

জানা যায়, সিপাহি মনোয়ার ও মিনুর বিপুল সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিম। তাদের সম্পদের তথ্য জানতে সম্প্রতি গাজীপুরে অভিযান চালিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। সংস্থাটির গাজীপুর ও নরসিংদী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মোজাহার আলীর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাহার আলী কালবেলাকে বলেন, ‘দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল। সরেজমিন সেগুলো সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিপাহি মিনুর গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর থানার বুজরুকি গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুর রউফ ও মায়ের নাম সেতারা বেগম। ঢাকার ঠিকানা হলো ২৬৪ বাটা গলি, মগবাজার। হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মিনু স্বাস্থ্যসেবা ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন ১ কোটি টাকা। রংপুরে গ্রামের বাড়িতে কিনেছেন ৬০ বিঘা চাষের জমি।

এদিকে ঢাকার রূপনগর টিনশেড কলোনিতে একটি ছয়তলা ভবন আছে সিপাহি মনোয়ার হোসেনের। তার বাবার নাম দেলোয়ার হোসেন ও মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। আয়কর নথি অনুযায়ী, ১১/৩৪৯, রূপনগর টিনশেড কলোনি হলো মনোয়ারের বর্তমান ঠিকানা।

জানা যায়, ০৭/১৮২, রূপনগর টিনশেড কলোনিতে শিরিন ভিলা নামে ছয়তলা ভবনটি মনোয়ার তার স্ত্রী শিরিন আক্তারের নামে দলিল করেছেন। দুই কাঠার প্লটটির বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। আর দুই ইউনিটের ছয়তলা ভবন গড়তে খরচ করেছেন আরও ২ কোটি টাকা। বাসা-১৭, লেন-১৩, ১১/ই, মিরপুর, পল্লবীতে শিরিনের আরও একটি ঠিকানা আছে। রূপনগরে মনোয়ারের আছে একটি ফ্ল্যাট। আশুলিয়ায় আছে ডুপ্লেক্স বাড়ি।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গাজীপুরে ফ্যামিলি মেডিকেল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফ্যামিলি ডেন্টাল, ফ্যামিলি মেডিকেল অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, ফ্যামিলি আই সেন্টার, গ্যালাক্সি মেডিকেল ইনস্টিটিউট ও ফ্যামিলি ফার্মেসি নামে ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আছেন মনোয়ার ও মিনু।

গত ১৯ মার্চ এসব প্রতিষ্ঠানে অভিযানও চালিয়েছে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানের সময় হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রেখেছিল তারা। এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে টাঙ্গাইলের ছোট কালীবাড়ি রোডের আকুর টাকুর পাড়ায় স্বাধীন বাংলা নার্সিং ইনস্টিটিউট নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আছেন মনোয়ার ও মিনু।

এক সময় এই নার্সিং হোমে বিনিয়োগের বিষয়টি স্বীকার করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানান সিপাহি মিনু রহমান নয়ন। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে মনোয়ার জড়িত আছেন। তার পরিবারের সদস্যরাও এর সঙ্গে রয়েছেন। মনোয়ারকে দেখেই নার্সিং ইনস্টিটিউটে বিনিয়োগ করেছিলাম। পরে যখন জানতে পারি সরকারি চাকরি করে ব্যবসা করা যাবে না, তখন বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিই।’

তার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই জানিয়ে মিনু দাবি করেন, ফ্যামিলি মেডিকেল অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল এবং গাজীপুরের অন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই তার।

তবে এই প্রতিবেদকের কাছে থাকা ফ্যামিলি মেডিকেল অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের নথি থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড মেম্বার হন মিনু। ওই নথিতে পরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন কাস্টমস গোয়েন্দার আরেক সিপাহি মনোয়ার হোসেন। গত বছরের ১৬ জুন ফ্যামিলি মেডিকেল অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ সভার নথি অনুযায়ী মিনু রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (অর্থ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সরকারি চাকরি বিধি অমান্য করে কীভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা চালাচ্ছেন—এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার সরাসরি ও মোবাইলে কনস্টেবল মনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মসের নথিতে মনোয়ার হোসেনের নাম পাওয়া যায়। গত বছরের ৩১ মে তৈরি করা ওই নথিতে মনোয়ার নিজের পরিচয় ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বসবাসের ঠিকানা ০৭/৩-১৮২, রূপনগর টিনশেড, রূপনগর, ঢাকা উল্লেখ আছে নথিতে।

দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মস, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট, গাজীপুরের ছয়টি ও টাঙ্গাইলের একটি প্রতিষ্ঠানের নথি থেকে মনোয়ার ও মিনুর মালিকানার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া গেছে। তাদের চাকরির বয়স, বেতন-ভাতা এবং আয়কর নথিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরেও তথ্য চাওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন

বুধবার বন্ধ রাজধানীর যেসব মার্কেট

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২৪ এপ্রিল : নামাজের সময়সূচি

রানা প্লাজা ধস : বিচার ও পুনর্বাসনের অপেক্ষায় ভুক্তভোগীরা

চবিতে নতুন ৫ জন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ

পরনের কাপড় ছাড়া দরিদ্র ৫ পরিবারের সর্বস্ব পুড়ে ছাই

মিষ্টি খেতে বছরজুড়ে থাকে ভিড়

জ্ঞান ফেরেনি মায়ের, ছেলের কবরের পাশে পায়চারি করছেন বাবা

খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণ

১০

এবার চিপকেও ব্যর্থ মোস্তাফিজ

১১

বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন ডা. আতিকুর

১২

চাঁদপুরে টাউন হল মার্কেটে আগুন

১৩

নারী বিশ্বকাপের ভেন্যু দেখতে সিলেটে আইসিসির প্রতিনিধি দল

১৪

সুদের ওপর কর অব্যাহতি পেল অফশোর ব্যাংকিং

১৫

এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় বাচসাস’র নিন্দা

১৬

চবিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর

১৭

ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রবাসীর স্ত্রী থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

১৮

সেতুমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়ায় শাহবাগ থানায় জিডি

১৯

পদ্মা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ

২০
*/ ?>
X