
যমুনা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী নদী। এর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। এই নদী অত্যন্ত ভয়ংকর। এটাকে বোঝা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এই নদীতে স্টেপ বাই স্টেপ কাজ করতে হবে। যা খুশি তা করা যাবে না। কোনো কথা নেই বার্তা নেই সাড়ে ছয় কিলোমিটার প্রশস্ততা কমানো হবে—যমুনা নদী এটা মানবে না। যমুনার কাছে ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা কিছুই না, উড়ে চলে যাবে।
এটি একটি অবাস্তব প্রকল্প। বিশ্বব্যাংকের কিছু আনাড়ি আছে তারা এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে লাফাচ্ছে। অভিজ্ঞ লোকদের পরামর্শ এবং কোনো প্রকার স্টাডি ছাড়াই এ ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
কথায় কথায় আন্তর্জাতিক আইনের কথা বলা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন কী বলে, সেটা জানতে হবে। আইন বলে, নদীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। পদ্মা সেতু ও যমুনা সেতু করার সময় নদীর সঙ্গে কথা বলে করা হয়েছে। নদীর সঙ্গে কথা বলার কৌশল আছে, নদীর সঙ্গে কথা বলতে হলে নদীর ভাষা বুঝতে হবে। এই কাজ যে করা যাবে না সেটা নয়। এই কাজ করতে ৩০ থেকে ৫০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে।
এটা বাস্তবসম্মত প্রকল্প নয়। আমার বিশ্বাস এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি ছুড়ে ফেলে দেবেন। কারণ উনি অনেক কিছু বোঝেন। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের যারা আছেন তারা তো কিছু বোঝেন না, প্রকল্প নিলেই তাদের লাভ আছে। তাই তারা এ ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব করেছে।
অনুমোদন পেলেও এটা করা সহজ হবে না। কারণ যমুনা নদীর সঙ্গে ভারতও জড়িত। এটা শুরু করলেই ভারত বাধা দেবে। এটার ব্যাপারে কথা বলার জন্য গত সপ্তাহে আসাম প্রদেশের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিল।
এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প কী কারণে গোপন রাখা হচ্ছে—তা বোধগম্য নয়। তারা কি মনে করে, একনেক টাকা দিলেই এই কাজ শুরু করা যাবে? সবাই চুপ করে বসে থাকবে না। এটা শুরু করলে পরিবেশবিদরা বসে থাকবে না, বাংলাদেশজুড়ে পরিবেশবিদদের প্রচণ্ড আন্দোলন গড়ে উঠবে।
লেখক : নদী বিশেষজ্ঞ