রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৬ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চার হাজার জনপ্রতিনিধিকে সক্রিয় করছে বিএনপি

চার হাজার জনপ্রতিনিধিকে সক্রিয় করছে বিএনপি

সরকারবিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে এবার দলের নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ১৯৯১ থেকে এ পর্যন্ত দলের সমর্থনে বিজয়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় স্থান পেয়েছেন চার সহস্রাধিক নেতাকর্মী। এর মধ্যে প্রথম ধাপে প্রায় আড়াই হাজার সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরা দলের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির বর্তমান কিংবা সাবেক সদস্য। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ধারাবাহিকভাবে তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে দলের হাইকমান্ড। প্রস্তাবিত রুটিন অনুযায়ী, ১৬ মার্চ পর্যন্ত বিভাগভিত্তিক এসব বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে ২৫০ জন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানা গেছে, এসব জনপ্রতিনিধির ইমেজ কাজে লাগিয়ে চলমান আন্দোলনে আরও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে চায় বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বর্তমান বা সাবেক—একজন চেয়ারম্যানের নিজ এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান থাকে। তিনি চাইলে যে কোনো সময় হাজারো লোককে সংগঠিত করতে পারেন।

এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স কালবেলাকে বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দল সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করবেন। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলে দল আরও শক্তিশালী হবে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। দাবি না মানলে আগামীতে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নামতে চায় দলটি। তবে সেই আন্দোলনের আগে নেতাকর্মীদের আরও ঐক্যবদ্ধ করতে চান তারা। এ লক্ষ্যে রাগ-ক্ষোভ এবং অভিমানে দীর্ঘদিন ধরে দূরে কিংবা নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীদের এক ছাতার নিচে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি সাবেক ছাত্রনেতাদের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের ৪ হাজার জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে ইতোমধ্যেই দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে দলটির নীতিনির্ধারকদের শঙ্কা, বিএনপি সমর্থিত অনেক জনপ্রতিনিধিকে নানা প্রলোভনে ফেলে কিংবা তাদের রাগ-ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে দলের ব্যানারে সেই নির্বাচনে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে সরকার। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনে এ প্রবণতা দেখা গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে দল সমর্থিত সাবেক জনপ্রতিনিধিদের বিএনপিতে সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড। তবে তালিকা তৈরি হলেও ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত করেনি দলটি। পর্যায়ক্রমে তাদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর আন্দোলনকে বেগবান করার কৌশল নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও পর্যায়ক্রমে বৈঠক করবে বিএনপি। আসন্ন রমজান মাসসহ আগামী এপ্রিল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এসব বৈঠক হওয়ার কথা। তবে সেটা অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। এ ছাড়া দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে বিভিন্ন সময় বহিষ্কৃত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টিও বিবেচনা করছে হাইকমান্ড। এ নিয়ে একটি টিম কাজও করছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে তৃণমূলের বেশ কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারও করা হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালবেলাকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বিভিন্ন সময় অনেককে বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর অনেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদনও করেন। এটা নিয়ে দলে আলোচনা আছে, তবে সিদ্ধান্ত হয়নি।

দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় ২০২১ সালে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেয় বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন করায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকারকে বহিষ্কার করা হয়। তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকেও বহিষ্কার করে দল। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানকে বহিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুসিক নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ২০২২ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কুকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।

এর বাইরেও ২০১৯ সালে ছাত্রদলের ষষ্ঠ সম্মেলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংগঠনটির ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নীতিনির্ধারকদের বৈঠকে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলেও পরে মাত্র একজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়। এ ছাড়া নানা কারণে বিভিন্ন সময় নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছাদরুল আমিন চৌধুরী, নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সারোয়ারে আলম চৌধুরী, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন, খানসামা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোবাশ্বের হক সরকার মুক্তি, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী শহীদুলসহ দল ও অঙ্গ সংগঠনের দেড় থেকে দুই শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য দলে কোনো আবেদন করেননি জানিয়ে তৈমূর আলম খন্দকার কালবেলাকে বলেন, নির্বাচনে দাঁড়ানো নিয়ে দল তো প্রথমে আমাকে না করেনি। দলের মহাসচিব বলেছেন—নির্বাচন করা যাবে। মহাসচিবের কথা বিশ্বাস করে নারায়ণগঞ্জের মানুষের দাবির কারণে আমাকে নির্বাচন করতে হয়েছে। অথচ আমাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হলো। এখন পর্যন্ত দলের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নিইনি। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। দল আবেদন করতে বললে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সাবেক এই সদস্য।

দল থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য অনেক আগেই আবেদন করেছেন জানিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন সময় শুনি যে আলোচনা হচ্ছে, প্রত্যাহার হবে। কিন্তু দল থেকে অফিসিয়ালি এখনো কিছু জানায়নি। তিনি বলেন, দল যাদের হাতে বিভাগীয় শহরের রাজনীতি তুলে দিয়েছে, তাদের হাতে দল সুসংগঠিত হবে না, আন্দোলনও শক্তি পাবে না। কারণ, যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের প্রতি কর্মীদের আস্থা নেই। দল (খুলনা বিভাগে) ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে রাজপথে পরাস্ত করতে হলে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ দল দরকার।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, বিভাগীয় শহর খুলনায় কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, কিন্তু মহানগরের লোক নেই। বিভিন্ন জেলা থেকে লোক এনে কর্মসূচি করতে হচ্ছে। এতে করে খুলনা মহানগরে বিএনপির অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফেসবুকে সমর্থকদের সমালোচনা দেখে হাসি পায় সাকিবের

ঢাকার কোথায় তাপমাত্রা কম, কোথায় বেশি

হোয়াইট বোর্ডকে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার

বৃষ্টির প্রার্থনায় অঝোরে কাঁদলেন রাঙামাটির মুসল্লিরা 

বৈদ্যুতিক খুঁটিতে প্রাইভেটকারের ধাক্কা, কৃষকলীগ নেতা নিহত

৬০ হাজার টাকা বেতনে ওয়ার্ল্ড ভিশনে চাকরি

আ.লীগ লুটপাট করে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করেছে : রিজভী

কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা

ইন্টারনেট ছাড়াই ছবি-ফাইল পাঠানো যাবে হোয়াটসঅ্যাপে

নেট দুনিয়ায় ভাইরাল বিমানবালাকে পাইলটের বিয়ের প্রস্তাব

১০

‘হিট অ্যালাট’ এর মেয়াদ বাড়ল

১১

গাজায় জিম্মি ইসরায়েলির ভিডিও প্রকাশ

১২

আ.লীগ নেতা টিপু হত্যা / অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল

১৩

‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশেই থাকবে’

১৪

দিনাজপুরে ইসতিসকার নামাজ আদায়

১৫

হাসপাতাল থেকে বাসায় তেভেজ

১৬

৪৬তম বিসিএস প্রিলি শুক্রবার, যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

১৭

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে হত্যা

১৮

যমুনা গ্রুপে ডিরেক্টর পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

১৯

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের ইসতিসকার নামাজ

২০
*/ ?>
X