রীতা ভৌমিক
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশকে কী দিয়েছি সময় বিচার করবে

দেশকে কী দিয়েছি সময় বিচার করবে

জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত এই নারী নেত্রী। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন মতিয়া চৌধুরী। ১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বারবার কারাবরণ করেছেন। ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে একাল-সেকাল সমাজে নারীদের অবস্থান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রীতা ভৌমিক..

কালবেলা : আপনি যখন রাজনীতিতে এসেছেন, সেই সময়ে নারীদের জন্য রাজনীতির পরিবেশ কেমন ছিল?

মতিয়া চৌধুরী : বাংলাদেশের মানুষ সাধারণভাবে অনেক উদারমনা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আইয়ুব সাহেবের সময়ে মিস ফাতেমা জিন্নাহ পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিক হয়েও পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় সেখানে কম ভোট পান। আমরা এ দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে ভোট বেশি দেওয়া হয়। কারণ, আমাদের দেশের মানুষ মেয়েদের রাজনীতিকে রক্ষণশীল হিসেবে দেখেন না। কাজ করতে গেলে কিছু তো বাধা থাকবেই। মানুষ জানে কে আন্তরিক, কে আন্তরিক নয়।

কালবেলা : সেই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এখনকার সময়ের রাজনীতিতে নারীর অবস্থানকে কীভাবে দেখছেন?

মতিয়া চৌধুরী : মেয়েদের রাজনীতিতে অবস্থান ও অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। পৃথিবীতে কোনো কিছু থেমে থাকে না। দেশও থেমে থাকে না। আমাদের সংবিধানে নারীর অধিকার রয়েছে। গ্রামে সকালে যেভাবে মেয়েশিশুরা দলবেঁধে বিদ্যালয়ে যায়, তারা সমঅধিকার নিয়েই বিদ্যালয়ে যায়। গ্রামের রাস্তায় দেখা যায়, সমপরিমাণ মেয়েরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা লেখাপড়ায়ও মনোযোগী বেশি। ছেলেরা বাইরে ঘোরাফেরায় অভ্যস্ত হয়; কিন্তু মেয়েরা ঘরে থাকায় গুরুত্বসহকারে লেখাপড়া করে। পৃথিবীতে কটা দেশে বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করে? গবেষণা করেও এ তথ্য বের করা সম্ভব হবে না। অনেক দেশের গবেষণা, সার্ভের রিপোর্ট আমরা পত্র-পত্রিকায় পড়ছি। কিন্তু এভাবে বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের বই অতীতের কোনো সরকার দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। নেত্রী ও আওয়ামী লীগের সযত্ন পরিচর্যা না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।

কালবেলা : প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং সংসদীয় উপনেতাও নারী (আপনি)। আরও অনেক বড় বড় পদমর্যাদায় নারী আসীন। এরপরও সমাজে নারীর অবস্থান সঠিকভাবে খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে কি?

মতিয়া চৌধুরী : দেশ, রাষ্ট্র, সমাজে নারীর অবস্থানের পরিবর্তন একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় দেখতে হবে, সূচক ওপরের দিকে যাচ্ছে না নিচের দিকে যাচ্ছে। আমি অহংকার না করে বলতে পারি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যখন দেশ থাকে, সেই সূচকগুলো ওপরের দিকে যায়। সূচকগুলোই বলে দেবে একজন নারী প্রধানমন্ত্রী কীভাবে দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। সূচক ভুল থাকলে আন্তর্জাতিকভাবে চ্যালেঞ্জ করত। আমাদের যারা সমালোচক তারাও এই ভুল সূচককে ধরিয়ে দিত। কিন্তু সূচকে ভুল নেই বলেই তারা এ ব্যাপারে কোনো ভিন্ন মনোভাব পোষণ করেননি। কোনোরকম চ্যালেঞ্জ করার অভিপ্রয়াস করেননি।

কালবেলা : আপনি সেই ষাটের দশক থেকে জাতীয় রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে সক্রিয়। এই সময়কালে সমাজ এগিয়েছে না পিছিয়েছে?

মতিয়া চৌধুরী : পৃথিবী এগিয়েছে, সেখানে সমাজ কীভাবে পেছাবে? সমাজ অবশ্যই এগুচ্ছে। এদেশে ভোটার তালিকায় মায়ের নাম রাখার ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। আগে কেউ মায়ের নাম জানত না। মায়ের নাম প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, নারী হওয়া কোনো অপরাধ নয়। নাম ওমুক নেসা, তমুক বেগম, খাতুন হওয়া অপরাধ নয়! এটা আজকের সমাজের কাছে সহজভাবে গ্রহণীয় হয়েছে। নারীর পোশাক নিয়ে অনেক কথা হয়। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে পোশাক পরিধানে পারিপার্শ্বিকতা, জনগণের চেতনা ও রুচির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মূল কথা হলো, মেয়েটি লেখাপড়া শিখছে কিনা? প্রকৃত জ্ঞান আহরণ করছে কিনা? যদি কেউ মনে করে স্কুল-কলেজে এলে তার পর্দা থাকবে না—এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সে-ই নেবে। কিন্তু পোশাকের জন্য বৈষম্যের শিকার কেউ হচ্ছে না।

কালবেলা : দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এত বছরে দেশকে কী দিয়েছেন?

মতিয়া চৌধুরী : দেশকে কী দিয়েছি, সেটা আমার পরিমাপের বিষয় নয়। আমি দেশকে কী দিচ্ছি, তার বিচার করবে জনগণ। প্রবহমান সময় বিচার করবে। কখনো নিজের কাজকে সেভাবে পরিমাপ করিনি। কাজের সুযোগ পাওয়াটাই আমার কাছে আনন্দের বিষয়। কাজ করতে পারাই আমার ভবিষ্যতের চাওয়া। যখন যে কাজ এসেছে করেছি। গুনে গুনে কাজ করিনি। এ জন্য বিধাতার কাছে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কোনো হতাশাও নেই।

কালবেলা : ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দেশের নারীদের জন্য আপনার বার্তা কী?

মতিয়া চৌধুরী : নারী মানুষ—এই স্বীকৃতি দেওয়া। আগে মানুষ তার পরে নারী। এটাই আমাদের মূল কথা।

কালবেলা : আমাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মতিয়া চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাতি শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারল কৃষককে

বাবার বাড়ি যাওয়ায় স্ত্রীকে ২৭টি কোপ দিলো স্বামী

সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ব্যারিস্টার খোকনের দলীয় পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি 

বাড়ি ফেরা হলো না বাবা-ছেলের

বাংলাদেশের দাবদাহ নিয়ে যা বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

অনুষ্ঠিত হলো বিইউএইচএস -এর প্রথম সমাবর্তন

ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে : ম্যাখোঁ

ছেলেদের দোষে ডুবছেন মাহাথির মোহাম্মদ

হিজাব আইন না মানায় ইরানে ব্যাপক ধরপাকড়

১০

তীব্র তাপপ্রবাহে বৃষ্টি চেয়ে হাজারো মুসল্লির কান্না

১১

মানব পাচারের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

১২

ঝিনাইদহে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন

১৩

কারিগরির ফাঁকা সনদ মিলল তোষকের নিচে, গ্রেপ্তার কম্পিউটার অপারেটর

১৪

ঝিনাইদহে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

১৫

ভোট দিলে যে শহরে মিলবে ফ্রি বিয়ার, ট্যাক্সিসহ নানা সুবিধা

১৬

কুমিল্লায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু

১৭

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফখরুলের সাক্ষাৎ

১৮

চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ

১৯

সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী 

২০
*/ ?>
X