আলী ইব্রাহিম
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১০:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ড. ইউনূসের রিটে আটকা সাড়ে ১১শ কোটি টাকা

ড. ইউনূসের রিটে আটকা সাড়ে ১১শ কোটি টাকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা দাবির বিপরীতে ১৯ বছরে উচ্চ আদালতে ৪২টি রিট করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব মামলায় আটকে আছে আয়করের প্রায় সাড়ে ১১শ কোটি টাকা। এনবিআরের কর অঞ্চল-১৪ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে দলনেতা করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এই কমিটি থেকে ড. ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত ৯টি প্রতিষ্ঠানের কর-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে এনবিআরের কর অঞ্চল ১৪-এর আওতাধীন সার্কেল ২৮৭-এর উপ-কর কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রিট মামলা-সংক্রান্ত এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

কর অঞ্চল-১৪ থেকে দুদকে পাঠানো নথির তথ্য অনুযায়ী, দানকর সংক্রান্ত পাওনা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে কর অঞ্চল-১৪-এর বিরুদ্ধে ড. ইউনূস নিজে বাদী হয়ে তিনটি রিট করেন। মামলাগুলো হলো যথাক্রমে—১০৮/২০১৫, ১০৯/২০১৫ এবং ১১০/২০১৫। এই তিন রিটে জড়িত আয়করের পরিমাণ ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা।

জানা গেছে, আয়কর বিভাগ অডিটের নোটিশ করার পর ২০০৮ সালে এনবিআরের বিরুদ্ধে রিট মামলা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম। এতে বিবাদী করা হয়েছে এনবিআরকে। রিট নম্বর-৯৭১১/২০০৮। এ ছাড়া গ্রামীণ কল্যাণের কাছে আয়কর দাবি করার পর ২০১৭ সালে ৬টি রিট মামলা হয় আয়কর বিভাগের বিরুদ্ধে; এক্ষেত্রে বিবাদী করা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এর সঙ্গে জড়িত সরকারের রাজস্বের পরিমাণ ৬৭১ কোটি ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৩২২ টাকা। আর গ্রামীণ শক্তি রিট মামলা দায়ের করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। এর সঙ্গে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ৫৭ লাখ ২৫ হাজার ১৯০ টাকা। ড. ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের পাওনা আয়কর আদায়ে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

জানা গেছে, কর অঞ্চল-১৪-এর বিরুদ্ধে দুটি রিট মামলা করেছে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট। এর সঙ্গে জড়িত সরকারের রাজস্বের পরিমাণ ২০৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩৭ টাকা। এই দুই রিটের বিপরীতে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে আগামী ২৯ আগস্ট পর্যন্ত। আর মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে এসব আয়কর পাওনা বলে দাবিও করতে পারছে না এনবিআর।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ টেলিকম শুধু এনবিআর নয়, কর অঞ্চল-১৪-এর বিরুদ্ধেও রিট মামলা করে ২০২০ সালে। এই মামলায় জড়িয়ে আছে ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া গ্রামীণ কল্যাণের আরও দুটি রিটে আটকে আছে ১৫৯ কোটি ৬৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, গ্রামীণ ট্রাস্টের তিনটি রিটে আটকে আছে ১০ কোটি ৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। আর গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশনের চারটি রিটে আটকে আছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ২৩ হাজার টাকার রাজস্ব। এই চারটি রিট মামলা করা হয় ২০০৪ সালে। আর গ্রামীণ উদ্যোগের একটি রিটে আটকে আছে ৬৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা, গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশনের চারটি রিটে জড়িত ১ কোটি ৮২ লাখ ১৮ হাজার টাকা, গ্রামীণ সামগ্রীর রিটে ৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা, গ্রামীণ ব্যাংকের রিটে জড়িত রাজস্ব ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা, গ্রামীণ ডানোন ফুডে ১৪ হাজার টাকা, গ্রামীণ বাইটেকে ৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা। আরকর অঞ্চল-১৪-এর বিরুদ্ধে করা গ্রামীণ শক্তির ৬টি রিটে আটকে আছে সরকারের ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসের রিটে আটকে আছে ১৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, গ্রামীণ ভেউলিয়া ওয়াটারে আটকে আছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক বরোয়ার্স ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের দুটি রিটে আটকে আছে ১৯ কোটি ৭৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিজের করা তিনটি রিট মামলায় আটকে আছে প্রায় ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকার রাজস্ব।

এ বিষয়ে এনবিআরের লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য আহাম্মদ উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, ‘ড. ইউনূস সাহেবের করা রিটের বিষয়গুলো এখনো এনবিআর পর্যন্ত আসেনি। বিষয়গুলো এই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে রয়েছে। এগুলো এনবিআরের কাছে এলে সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।’

এনবিআরের প্যানেল আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম কালবেলাকে বলেন, এনবিআরের পাওনা দাবি করদাতার কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেই তো আদালতে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে দাবির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

ড. ইউনূসের রিটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো এসব মামলা আমার কাছে আসেনি। এলে এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।’

ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে বলেন, গ্রামীণ টেলিকমসহ ড. ইউনূস প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো মূলত দাতব্য প্রতিষ্ঠান। কারণ কোম্পানির মেমোরেন্ডামে পরিষ্কার লেখা আছে, কোম্পানির মালিকরা এই কোম্পানি থেকে কোনো ধরনের ডিভিডেন্ড বা মুনাফা নিতে পারবেন না। দাতব্য প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণেই গ্রামীণ এত জনপ্রিয়। কিন্তু এনবিআর এসব কোম্পানির কাছ থেকে মুনাফাভিত্তিক কোম্পানির মতো হিসাব করে কর দাবি করেছে। এ কারণেই আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৃষ্টির জন্য শিক্ষার্থীদের ইসতিসকার নামাজ আদায়

পাহাড়ি গ্রামে পানির কষ্টে মানুষ

নতুন শিক্ষাক্রমে ক্লাসে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

রেলের ভাড়া বৃদ্ধিতে প্রতিবাদ

একটি বইয়ের আলেখ্য

যে কারণে আল্লাহতায়ালা বৃষ্টি বন্ধ করে দেন

বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে বাস সহায়তা দেবে ববি কর্তৃপক্ষ

অনিয়ম ঢাকতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা

কমিউনিটি ব্যাংকে ক্যাড়িয়ার গড়ার সুযোগ, কর্মস্থল ঢাকা

দেশকে এগিয়ে নিতে কৃষির আধুনিকায়ন ছাড়া বিকল্প নেই : তাজুল ইসলাম

১০

এবার মক্কা ও মদিনায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

১১

বরিশালে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

১২

জয় চৌধুরী সভ্য অভিনয়শিল্পী : শিরিন শিলা

১৩

রায়ের আগে এমন গল্পে, সেন্সরের আপত্তি : খসরু

১৪

ফুলবাড়ীতে হিটস্ট্রোকে এক নারীর মৃত্যু

১৫

ইরানের হাতে শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম

১৬

তীব্র তাপদাহে বৃষ্টির জন্য নামাজ ও প্রার্থনা

১৭

বিএনপি নেতা গয়েশ্বরের জামিন

১৮

শনিবারও খোলা থাকবে স্কুল, আসছে নতুন সিদ্ধান্ত

১৯

প্রতিদিন ৫০টি চড়-থাপ্পড়েই বাড়বে নারীদের সৌন্দর্য!

২০
*/ ?>
X