
গুহা শব্দটি শুনলেই কল্পনায় ভেসে ওঠে প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকারাচ্ছন্ন এক গর্ত। যেখানে যখন তখন উঁকি দিতে পারে ভয়ানক কোনো প্রাণী কিংবা রক্তচোষা বাদুড়। তবে এমনও গুহা আছে, যেখানে নিয়মিত বসে গানের আসর, চলে সিনেমার শুটিং কিংবা একসময় যুদ্ধ চলাকালীন আশ্রয় নিত একদল মানুষ। লিখেছেন ফয়সল আবদুল্লাহ
দ্য লস্ট সি
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আন্ডারগ্রাউন্ড লেক দ্য লস্ট সি। টেনেসির সুইটওয়াটার অঞ্চলের কাছে অবস্থিত গুহাটি সুবিশাল। ১৯১৫ সালে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয় প্রশাসন। তখন এর ভেতর নিয়মিত বসতো মোরগ-লড়াইয়ের আসর। নাচ-গানের জন্য আলাদা মঞ্চও বানানো হয়েছিল গুহার ভেতরকার উঁচু একটা পাথুরে মেঝেতে। এখন অবশ্য দিন বদলেছে। লোকে এখন গুহার ভেতরের লেকে নৌকায় করে নিরিবিলি ঘুরে বেড়ায়। কেউ বা শান্ত নীল জলে কাটে সাঁতার।
স্যান্ড কেইভ
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের গুহাটিতে ঢুকে পড়ত আস্ত রেল। আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের এক ধরনের বিরতির স্থান ছিল এটি। আঠারো শতকের শুরুর দিকে যখন আমেরিকার দক্ষিণে দাসপ্রথা ছিল তখন পালিয়ে আসা মানুষগুলো রেলে করে আসার সময় এই গুহাতেই নিত যাত্রাবিরতি। আশপাশে জঙ্গলে ঢাকা বলে গুহাটির ভেতর আস্ত ট্রেনও কারও নজরে আসত না। রেল ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিপ্লবীদের অভয়ারণ্য হিসেবে কাজ করেছে স্যান্ড কেইভ।
মারবেল আর্ক
আয়ারল্যান্ডের গুহাটি বেশ গোছাল। পর্যটকদের আলোকসজ্জা, সেতু ও সিঁড়ি আছে এতে। ২০১৩ সালে এখানে একটি থিয়েটারও চালু হয়। গুহার আলো-আঁধারি পরিবেশে সেবার প্রথম পরিবেশিত হয়েছিল স্যামুয়েল বেকেটের ‘নট আই’ নাটকটি। সিলিংয়ে ঝুলে থাকা সুচালো স্ফটিক, দেয়ালের বড় এবড়োখেবড়ো পাথর; সবই আছে সংরক্ষিত। সুবিশাল এ গুহার কিছু কিছু স্থান একদম সরু। টর্চ সঙ্গে না থাকলে হাঁটাও দায়। মূলত কয়েকটি গুহা মিলিয়েই এই মারবেল আর্ক কেইভস।
সল্ট হিলিং ক্যাভার্ন
জার্মানিতে আছে কয়েক লাখ টন খনিজ লবণে ভরপুর গুহা। ২৫ কোটি বছর আগের সেই গুহার নাম সল্ট হিলিং ক্যাভার্ন ব্রেগটেসগ্যাডেন। সেখানে লোকরা যায় লবণ-থেরাপি নিতে। থেরাপির কোর্স তিন সপ্তাহব্যাপী। এই সময় গুহার ভেতর নিয়ম করে প্রতিদিন কাটাতে হবে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা। যারাই এ থেরাপি নিয়েছেন প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, সুবিশাল লবণের যে স্তর, সেটার প্রভাবেই নাকি তাদের মানসিক চাপ, অ্যালার্জি এমনকি ব্রঙ্কাইটিসও সেরে গেছে।
আরওয়া গুহা
ভারতের মেঘালয়ের সোহরা এলাকায় আছে আরওয়া গুহা। মেঘালয়ের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য এটি। গত বছর সেই গুহার ভেতরেই হয়েছিল একটি কনসার্ট। আরওয়া গুহা ও মেঘালয়ের প্রকৃতি বাঁচানোর আহ্বানই ছিল ক্লিন সোহরা ক্যাম্পেইনের উদ্যোগে আয়োজিত ওই কনসার্টের উপজীব্য।
সিনেমার শুটিং
অনেক গুহাতেই এখন নিয়মিত সিনেমার শুটিং হচ্ছে। থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহায় আটকেপড়া একটি কিশোর ফুটবল টিমকে উদ্ধারের সত্য ঘটনা অবলম্বনে গত বছর হলিউড পরিচালক রন হাওয়ার্ড বানিয়েছেন ‘থার্টিন লাইভস’। এ সিনেমার বেশ কিছু দৃশ্যে ওই গুহাটিকেই ব্যবহার করেন পরিচালক।