দিনের বেলায় সুনসান নীরবতা। সন্ধ্যা নামলেই নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এক্সক্যাভেটরগুলো চলে যায় পাশের বালু পয়েন্টে। একে একে আসতে থাকে ছোট-বড় ট্রাকগুলো। সন্ধ্যা গড়িয়ে একটু অন্ধকার হলেই শুরু হয় বালু উত্তোলনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের গুপিনপুরে বালু উত্তোলনের এই মহোৎসব চলছে। এদিকে পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা, ভবানীপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া বেড়া উপজেলার যমুনা নদী, ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোল করা হয়। তবে কিছুদিন হলো প্রশাসনের চাপে তা বন্ধ রয়েছে।
গণমাধ্যমের চোখ ফাঁকি দিতে দিনের আলোর বদলে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে বালুখেকোরা। রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বালু উত্তোলন হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকাও রহস্যজনক। রাতব্যাপী পুরো সুজানগর উপজেলায় বালুর ট্রাকগুলো দাপিয়ে বেড়ালেও কোনো বাধার মুখে পড়তে হয় না।
এর আগে সাতবাড়িয়ার গুপিনপুর ও ভাটপাড়ায় বালু উত্তোলনের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। প্রকাশিত সংবাদে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হলে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সেটি বন্ধ করে দেয়। বন্ধের কয়েকদিন পর নানা মহলকে ম্যানেজ করে আবারও শুরু হয়েছে এই বালু উত্তোলন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সারা রাত শতাধিক গাড়ি চলাচল করে। এইসব গাড়ির শব্দে শিশুরাও ঘুমাতে পারে না। প্রতিবাদ তো দূরের কথা, তাদের যন্ত্রণায় বাড়িতে ঘুমাতেও পারছেন না। রাস্তাঘাটের অবস্থা আরও খারাপ। কিছু বললেই হুমকি দেওয়া হয়। তারা আরও জানান, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতিবছর বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সড়ক, স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সে সময় ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকিতে রয়েছে নদী রক্ষা বাঁধও।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, কে বা কারা বালু উত্তোলন করছেন জানি না। রাতের বালু উত্তোলন নিয়ে কেউ আমাকে এ পর্যন্ত কিছু বলেনি। বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে যে-ই জড়িত থাকুক, প্রশাসনের সাহায্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুজানগর থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, রাতে নদীর মাঝে যাওয়া সম্ভব নয়। তারপরও আমরা যখনই যাই, তখনই তারা সবকিছু ফেলে পালিয়ে যায়। দুদিন আগেও নদীর তীর থেকে আমরা কয়েকজনকে ধরে মামলা দিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে সুজানগর ইউএনও তরিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, রাতে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানি না। এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।