
খন্দকার মাইনরুজ্জামান সেন্টুর বয়স সত্তরের কোটায়। বয়স, রোগ-শোক আর অভাবের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কিন্তু মন তার প্রচণ্ড সাহস আর তারুণ্যে ভরপুর। তাই তো মনের জোরেই কষ্ট বুকে চেপে অভাবের তাড়নায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালান গ্রিন সিটি ক্লিন সিটিখ্যাত রাজশাহী মহানগরীর পথে পথে।
নগরীতে চলাচল করে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি অটোরিকশা। অন্যসব রিকশাচালকের পাশের সিটে যাত্রী বসলেও সেন্টুর বসার পাশের সিটে থাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার। সেখান থেকে অক্সিজেন নিয়েই রিকশা চালান তিনি। অক্সিজেনের পাইপ নাকে নিয়ে রিকশা চালানো সেই মাইনরুজ্জামান সেন্টু এখন অসুস্থ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।
মাইনরুজ্জামান সেন্টু মহানগরীর কলাবাগানের বাসিন্দা। দাম্পত্য জীবনে তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাদের সবার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আলাদা আলাদা সংসার। তাই বাধ্য হয়ে এ বয়সেও চরম অসুস্থ শরীর নিয়েও রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় সেন্টুকে। পাশাপাশি অক্সিজেন সিলিন্ডারের জোগানও দিতে হয় তাকে। সেন্টুর রিকশার চাকা ঘুরলে চলে সংসার, জোটে অক্সিজেন সিলিন্ডারের টাকা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেন্টু বলেন, সাত বছর ধরে ফুসফুসের সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছি। আমার আগে ভাজাপোড়ার দোকান ছিল। ২০১৫ সালের দিকে সেই দোকান বন্ধ হয়ে যায়। পরের বছর এনজিও থেকে ঋণ করে ও কিছু ধার নিয়ে ৮০ হাজার টাকায় রিকশা কিনি। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকার বেশি ওষুধ লাগে।
সেন্টুর স্ত্রী চম্পা বেগম বলেন, তিন বছর ধরে বেশি অসুস্থ হয়ে গেছেন তিনি। এখন প্রতিদিন তিনটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে। রিকশা চালিয়ে দুজনের সংসারের খরচ, তার অক্সিজেনসহ ওষুধ কেনেন। আত্মীয়স্বজনই বা আর কত দেবে? আপনারা পারলে সাহযোগিতা করুন। রোববার রিকশা চালিয়ে এসে অসুস্থ হলে রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফেসবুকে সেন্টুকে প্রথম ভাইরালকারী নগরীর খাদক রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী রাজীব হোসেন কালবেলাকে জানান, সিলিন্ডার থেকে বের হওয়া অক্সিজেনের নল সবসমই তার নাকের ভেতর রাখতে হয়। এভাবেই সাত বছর ধরে অক্সিজেন নিয়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন সেন্টু। এটি আমাদের নজরে এলে আমরা তার ছবি নিয়ে ফেসবুকে ছেড়ে দিই।
তিনি আরও বলেন, সেন্টুর নিউজ ও ছবি গণমাধ্যমে এবং ফেসবুকে ভাইরালের পর চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং সমাজসেবক হিসেবেও পরিচিত ফারাজ করিম চৌধুরী মাইনরুজ্জামান সেন্টুর পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
রামেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক শামীম আলম বলেন, আমরা সেন্টুর সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। যক্ষায় আক্রান্তের পাশাপাশি এখন তার হার্টেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। বেশি পরিশ্রম করলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। জরুরি ভিত্তিতে তার একটি অক্সিজেন মেশিন প্রয়োজন।