প্রায় দুই বছর আগে বগুড়ার সারিয়াকান্দির জেলে শাহ আলমের ছোট ছেলে রিয়ান অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের দেওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানতে পারেন, ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে তিন বছরের শিশুটি। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের রক্তরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সুরজিৎ সরকার তিতাসের শরণাপন্ন হন তিনি। ডা. তিতাস ফের পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, শিশু রিয়ান আসলেই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন তার। মাছ ধরে সংসার চালানো শাহ আলমের পক্ষে কোনোভাবেই এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। বিষয়টি ডাক্তারকে জানালে ওই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন তিনি।
চিকিৎসার ব্যয়ের একাংশ নিজ থেকেই বহনের আশ্বাস দেন তিনি। কিছুটা স্বস্তি পায় পরিবারটি। এরপর শিশু রিয়ানকে ভর্তি করা হয় সেখানে। এক বছরের বেশি টানা চিকিৎসার পর এখন অনেকটাই সুস্থ রিয়ান। শুধু রিয়ান নয়; হাসপাতালের এই বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীর গল্পই এমন। তিন বছর আগে প্রথম এই বিভাগটি চালু হয় যে দুজন রোগীকে নিয়ে। তার মধ্যে একজন খায়রুজ্জামান জিহাদ। ১০ বছর বয়সী জিহাদের বাবা আব্দুল খালেক ঢাকার একটি রিকশা গ্যারেজের শ্রমিক। আর মা জোলেখা বেগম গার্মেন্টে কাজ করেন। এ কারণে নানি কোলেস্তারা বেগমের কাছে থেকে মাদ্রাসায় পড়ত জিহাদ। তারও ধরা পড়ে ব্লাড ক্যান্সার। তার পরিবারেরও আর্থিক সংগতি ছিল না চিকিৎসা চালানোর।
চিকিৎসকরা জিহাদের পরিবারকে জানান, হাসপাতালের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা হয়তো প্রদান করা সম্ভব হবে না, কিন্তু চিকিৎসা দেওয়া যাবে। তাতেই আশ্বস্ত হয়ে প্রথম রোগী হিসেবে ভর্তি হয় জিহাদ। এক অর্থে হাসপাতালে থেকেই লেখাপড়া চালিয়ে গেছে সে। তিন বছর পর এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর জিহাদ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব নান্দুরা ফাজিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। গত তিন বছরে এভাবে বগুড়ার এই ইউনিট থেকে চিকিৎসা নিয়ে ১২৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখনো ভর্তি আছেন ৪০ জন, যদিও বেড সংখ্যা মাত্র ১৬টি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত তিন বছরে ক্যান্সার আক্রান্ত প্রায় ৫০০ রোগী সেখানে ভর্তি হলেও সবাই পূর্ণ মেয়াদে (কোর্স পরিপূর্ণ করা) চিকিৎসা নেননি। কিছুটা সুস্থ বোধ করে অনেকে বাড়ি ফিরে গেছেন। আবার অনেক রোগী মারাও গেছেন। যেসব রোগী রোগ নির্ণয়ের প্রাথমিক পর্যায়েই ভর্তি হয়ে পূর্ণ মেয়াদে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই বিভাগে ছয় চিকিৎসকের পদ থাকলেও মাত্র দুজন দিয়ে চলছে এই সেবা কার্যক্রম। এ ছাড়া চিকিৎসা সহকারী ও টেকনিশিয়ান নেই।
বিভাগীয় প্রধান ডা. সুরজিৎ সরকার তিতাস জানান, এই অঞ্চলের অধিকাংশ রোগীর আর্থিক অবস্থা এই চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের মতো নয়। ফলে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা পূর্ণ মেয়াদে চালানো অনেকের পক্ষেই সম্ভবপর হয় না। এ ছাড়া হাসপাতালেও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে পরীক্ষাগারসহ জনবল সংকট এবং পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ নেই। এই অবস্থার মধ্য দিয়েও চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। আগে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে হতো। সেখানে চিকিৎসা ব্যয় আরও বেশি। এখন অন্তত হাতের নাগালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ।
হাসপাতালের যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেসব উত্তরণ করা গেলে ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসা আরও সহজলভ্য হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। যোগাযোগ করা হলে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ক্যান্সারের ওষুধ সরবরাহ না থাকার কারণে রোগীর চিকিৎসার ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এবার স্থানীয় কেনাকাটায় এই বিভাগের কিছু ওষুধ সংযুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া লোকবলের শূন্যপদ পূরণসহ নতুন পদ সৃষ্টির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এটি করা গেলে এই অঞ্চলের ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা আরও ত্বরান্বিত হবে।হাসপাতালের যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেসব উত্তরণ করা গেলে ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসা আরও সহজলভ্য হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। যোগাযোগ করা হলে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ক্যান্সারের ওষুধ সরবরাহ না থাকার কারণে রোগীর চিকিৎসার ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এবার স্থানীয় কেনাকাটায় এই বিভাগের কিছু ওষুধ সংযুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া লোকবলের শূন্যপদ পূরণসহ নতুন পদ সৃষ্টির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এটি করা গেলে এই অঞ্চলের ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা আরও ত্বরান্বিত হবে।