
পাত্রী দেখতে গত ২৮ এপ্রিল টেকনাফে গিয়েছিলেন তিন বন্ধু রুবেল, ইমরান ও ইউসুফ। সেখান থেকে তাদের অপহরণ করে পাহাড়ের গহিন জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের নির্যাতন করা হয় এবং তা ভিডিও করে পরিবারের কাছে পাঠায় অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু সে টাকা না পেয়ে এক পর্যায়ে তাদের গুলি করে হত্যার পর পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে হত্যার আলামত নষ্ট করতে পুড়িয়েও ফেলা হয় মরদেহগুলো।
গতকাল র্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫ অধিনায়ক সাইফুল ইসলাম সুমন এসব তথ্য জানান। র্যাবের দাবি, এ তিনজনকে অপহরণের মূল হোতা সোনালি ডাকাত। গত বুধবার টেকনাফের হাবিরছড়া দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে মরদেহগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়। বুধবার রাতেই এমরুল কবির ওরফে ফইরা নামে আরেকজনকে আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, মরদেহগুলো উদ্ধারের পর তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে করা হবে ডিএনএ টেস্ট। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ডিএনএ মিললে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, পাত্রী দেখানোর লোভ দেখিয়ে রুবেল, ইমরান ও ইউসুফকে টেকনাফে নেন সোনালি ডাকাত। পরদিন রুবেলের মোবাইল থেকে অপহরণকারীরা তার পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পাশাপাশি পরিবারকে ভয় দেখাতে নির্যাতনের একটি ভিডিও তাদের কাছে পাঠানো হয়। ঘটনাটি জানানোর পর র্যাব অপহৃতদের উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়।
র্যাব জানায়, ওই ভিডিও দেখে অপহরণকারীদের একজনকে শনাক্ত করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একাধিক অভিযান চালায় র্যাব। সেই জেরে গত বুধবার টেকনাফের হাবিরছড়ার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে সোনালি ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার অন্য সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
আটকের পর সোনালি র্যাবকে জানায়, অপহৃতদের গুলি করে হত্যার পর পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে লাশগুলো আগুনে পুড়িয়ে আলামত ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়। এ সময় সোনালিকে নিয়ে র্যাবের একাধিক দল পাঁচ ঘণ্টা দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে তাদের আস্তানায় পৌঁছে। সেখানে একটি স্থানে দুটি গলিত লাশ ও কিছুটা দূরে আরেকজনের গলিত লাশ পাওয়া যায়।
সোনালি আরও জানায়, বিভিন্ন সময় অপহৃতদের ধরে এনে এ আস্তানায় নির্যাতন চালানো হতো। সে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে তাদের পরিবারকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত তারা। টাকা না পেলে হত্যা করে পাহাড়ি এলাকায় ফেলে দিত।
এদিকে আটক সৈয়দ হোসেন সোনালি ডাকাত ও এমরুল করিম ওরফে ফইরাকে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন র্যাব কর্মকর্তা। তাদের দুজনের নামে কোনো মামলা কিংবা অপরাধের রেকর্ড নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তবে তারা অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত বলে জানতে পেরেছে র্যাব।