
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার গঙ্গাদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে নতুন ভবন নির্মাণকাজ। আর ভবন নির্মাণের নানা সামগ্রীতে পাঁচ মাস ধরে দখল হয়ে আছে স্কুলটির মাঠ। স্কুল ভবনের বারান্দাও বাদ যায়নি। এমনকি শ্রমিকরাও বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে রয়েছে। ফলে বিদ্যালয় মাঠে খেলাধুলা করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। পাশাপশি নষ্ট হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে পড়ালেখার পরিবেশ। এ অবস্থা আরও ছয় মাস থাকবে বলে মনে করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
৮০ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৫ টাকা ব্যয়ে ওই বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণের কাজ চলমান। নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইথিন এন্টারপ্রাইজ ওই ভবনের নির্মাণকাজ করছে। বিধান অনুযায়ী বিদ্যালয় মাঠে নির্মাণসামগ্রী না রেখে ঠিকাদারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিকল্প স্থান ব্যবহার করার কথা। এমনকি নির্মাণশ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থাও তাদেরই করতে হবে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে চিত্র উল্টো দেখা গেছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এ পর্যন্ত উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে খেলাধুলায় অনেক পুরস্কার ঘরে এনেছে। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলেও এ বিদ্যালয় এগিয়ে। এলাকায় এ বিদ্যালয়ের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে; কিন্তু বিদ্যালয়ের নতুন একটি ভবন নির্মাণের ফলে খেলার মাঠের পুরো অংশজুড়ে রয়েছে নির্মাণসামগ্রী। গত বছর জুলাই থেকে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ শেষ হতে আগামী জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, তিন শতাধিক ছাত্রী রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। তাদের কোলাহল ও হৈ-হুল্লোড়ে মুখর থাকত বিদ্যালয়টির খেলার মাঠ। গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যালয়ের সেই মাঠটি দখল করে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। শুধু মাঠই নয়, বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষ দখল করে নির্মাণশ্রমিকদের জন্য রাতযাপনের ব্যবস্থা করেছেন নির্মাণকাজের ঠিকাদার।
সরেজমিন দেখা যায়, গঙ্গাদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠজুড়ে নির্মাণসামগ্রীর ইট, কাঠ, খোয়া, লোহা পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষের ভেতরে শ্রমিকরা তাদের খাবারের জিনিসপত্র ও কাপড় রেখেছেন। সব মিলিয়ে ছড়িয়ে থাকা এসব সামগ্রী অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটার পাশাপাশি বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কাও রয়েছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ করেন, খেলাধুলা তো দূরের কথা, শ্রেণিকক্ষে ঢুকতেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রতিদিন সকালে এসে শ্রেণিকক্ষ থেকে শ্রমিকদের জিনিসপত্র সরিয়ে রেখে ঢুকতে হয়। এ অবস্থা আর কতদিন চলবে কে জানে। বিদ্যালয়ে এসে দেখেশুনে না চললে পায়ে পেরেক ফোঁটার আশঙ্কা রয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোছাদ্দেক হোসেন, নুসরাত জাহান, সাব্বির হোসেন, রাব্বি হাসান, সাদিয়াসহ অনেকেই জানায়, অনেক দিন ধরে মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখায় খেলাধুলার পাশাপাশি শিক্ষার্থী সমাবেশ বন্ধ রয়েছে। অনেকেই জাতীয় সংগীত গাইতেও ভুলে গেছে। চলাচল করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত এর সমাধান চায় তারা।
ইথিন এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে অবস্থান করায় ওই কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা নুর আলম বলেন, শুরুর সময় বিদ্যালয়ের আশপাশে কোনো জায়গা না পাওয়ায় মাঠেই এসব সামগ্রী রাখা হয়েছে। জায়গা পাওয়া গেলে সবকিছু সরিয়ে নেওয়া হবে।
প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, ঠিকাদারকে প্রথমেই নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও তিনি জোরপূর্বক মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ দখলে নিয়েছেন। ভবন নির্মাণের জন্য শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার তো দূরের কথা, বিদ্যালয় মাঠেও নির্মাণসামগ্রী রাখার নিয়ম নেই। তবে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজের কারণে এসব মেনে নিতে হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র এখানে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তদন্ত করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।