ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার চর মানিকনগর এলাকায় রাতের অন্ধকারে ভেক্যু মেশিন দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে শত শত বিঘা কৃষিজমি পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে। দেখলে মনে হবে যেন জমিজুড়ে পুকুর খনন চলছে।
কৃষিজমি রক্ষায় সরকারের কড়া নির্দেশ রয়েছে। তবে এসব বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
নবীনগরের স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল কৃষিজমির মাটি কাটার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান খান মাসুমের নেতৃত্বে কাদির, জামাল মিয়া, যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন, ওসমান মিয়াসহ একটি প্রভাবশালী চক্র মাটি কাটছে। দেড় মাস ধরে ভেক্যু মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর গর্ত করে ২৪টি পাওয়ার ট্রলির মাধ্যমে দিনরাত মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে চর মানিকনগর এলাকায় কৃষিজমির মাটি কাটা হচ্ছে। বিশাল বাল্কহেডে করে কোটি কোটি টাকার মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে ফসলি জমি চিরতরে মানচিত্র থেকে মুছে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে জলাশয়। এভাবে গভীর গর্ত করায় পাশের কৃষিজমিও ভেঙে পড়ছে। ফলে কিছু কিছু জমির মালিক বেশি টাকার লোভে মাটি বিক্রি করলেও অনেকেই বাধ্য হয়ে বিক্রি করছেন। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় শত শত বিঘা কৃষিজমি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।
এ ছাড়া মাটি ব্যবসায়ীদের থাবা থেকে বাদ যাচ্ছে না খাসজমি, খাল এবং নদনদীর তীরও। অপরিকল্পিতভাবে নদনদীর পাড় কেটেও বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি নেওয়া হচ্ছে। গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, যা জলবায়ুর ওপর প্রভাব পড়বে। এভাবে কৃষিজমি নষ্ট করায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এসব বিষয় জেনেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না—এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
তবে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরও কোনো মাথাব্যথা নেই। পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে কৃষিজমি থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে নিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করছে অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জানান, এভাবে কৃষিজমির মাটি কাটায় শুধু এলাকার ক্ষতি হচ্ছে না, সারা দেশেরই ক্ষতি হচ্ছে। দেশের ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে কৃষিপণ্যের দাম দিন দিন আরও বাড়বে। মাটি কাটা ঠেকাতে প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কৃষিজমি থেকে ভেক্যু মেশিন দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় আমাদের ফসলি জমিসহ গ্রামটি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে মাটি কাটা বন্ধ না করলে এক সময় এলাকার কৃষিজমি হারিয়ে যাবে। রাতের অন্ধকারে দু-তিনটি ভেক্যু দিয়ে গভীর গর্ত করে এভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ওই অসাধু ব্যক্তিরা।
অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান খান মাসুম কালবেলাকে বলেন, স্থানীয় কিছু কৃষক জমি সমতল করার অনুরোধ করলে ৩ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে জমি সমতল করে চাষাবাদের উপযোগী করে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ইউএনও একরামুল সিদ্দিক মোবাইল ফোনে বলেন, ফসলি জমি রক্ষায় কিছুদিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জরিমানা করা হয়। প্রয়োজনে আবার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।