মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মিল মালিকরা হলুদ-মরিচে ভেজাল মেশানোর মহোৎসবে মেতেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে দু-একবার অভিযান পরিচালনা করা হলেও তা যথেষ্ট মনে করছে না সচেতন নাগরিক সমাজ। প্রশাসনের যথাযথ তদারকি না থাকায় তারা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয় ভোক্তা ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণ করার দাবি উঠলেও প্রশাসন বিষয়টি তেমন আমলে নিচ্ছে না। জানা যায়, শাহজাদপুর পৌর এলাকার কয়েকটি মিল ছাড়াও মশিপুর, শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজার, সেন্ট্রাল রোড, সাগরদীঘি সড়ক ছাড়াও গ্রাম পর্যায়ের হাটবাজারেও গড়ে উঠছে মসলা মিল। এর মধ্যে সিন্দুরখান বাজার, মির্জাপুর বাজার অন্যতম।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার মৌলভীবাজার সড়ক, নতুন বাজার দক্ষিণ গলিসহ উপজেলায় অর্ধশত মিলেই চলছে হলুদ ও মরিচের গুঁড়ার সঙ্গে ভেজাল ও কাপড় রং করার বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য এবং ইটের গুঁড়া মেশানোর কাজ। কাপড়ে মেশানোর রং, ঘাসের বীজ আর কিছু খাবার অনুপযুক্ত পচা মরিচ রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয় মরিচের গুঁড়া। অন্যদিকে হলুদের গুঁড়ায়ও মেশানো হয় রং ও ঘাসের বীজ। এসব ভেজাল মরিচ ও হলুদের গুঁড়া শ্রীমঙ্গল থেকে বৃহত্তর সিলেট বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে বাজারজাত করে আসছে চিহ্নিত একটি চক্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মসলা মিলের এক শ্রমিক বলেন, এক মণ হলুদের গুঁড়ার সঙ্গে এক মণ নিম্নমানের আতপ চালের গুঁড়া মেশানো হয়। তিনি
আরও বলেন, মরিচের সঙ্গে কখনো ইটের গুঁড়া
আবার কখনো গুঁড়া রং দিয়ে কালার করে ভারতের গোলমরিচ এবং কেমিক্যাল ব্যবহার করে ঝাঁঝাল করা হয়। মসলা মিলের এই শ্রমিক আরও বলেন, অনেক
সময় কিছু পাইকার এসে বলে তাদের এভাবে ভেজাল করে হলুদ-মরিচের গুঁড়া করে দিতে হবে। সেসব পাইকারের কথায় মিল মালিকরা ভেজাল মেশানোর কাজে জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে সরেজমিন প্রায় সবকটি মসলা তৈরির মিল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না
করে নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে
ভেজাল ও নকল মসলা পণ্য। আবার সেই মসলাই নকল প্যাকেটে চলে আসছে বাজারের খুচরা-পাইকারি দোকানে।
জানা যায়, আসছে ঈদকে সামনে রেখে এসব ভেজাল ব্যবসায়ী বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিএসটিআইর অনুমোদন না নিয়ে নকল অনুমোদনপত্র ছাপা হয়ে যাচ্ছে প্যাকেটের গায়ে। নকলের দাপটে এখন আসল পণ্য চেনাই দায় হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মিল মালিক জানান, প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে মাসোহারা দিয়ে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে এই ভেজাল মসলা তৈরি করে আসছেন তারা।
ভেজাল মসলা উৎপাদনের মসলা মিলগুলোতে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন কালবেলাকে জানান, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাদ্যে ভেজাল কোনোভাবেই মানা যায় না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক আল-আমিন কালবেলাকে বলেন, আমরা মাঝেমধ্যে অভিযান চালাই; কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আগের অবস্থায় চলে আসে। তবে দ্রুতই আমরা অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।
সিলেট বিভাগের সাবেক পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাক্তার হরিপদ রায় কালবেলাকে বলেন, খাদ্যপণ্য ভেজালের কারণেই দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেইলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি এগুলো অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আর আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রোগীদের লম্বা লাইন।