
মাছ কাটার পর ফেলে দেওয়া মাছের আঁশে ভাগ্যবদলেছে কুমিল্লার মাহবুব আলম নামে এক যুবকের। এক সময় ছিল যখন মাছের আঁশ ফেলে দেওয়া হতো, সময়ের পরিক্রমায় সেই ফেলে দেওয়া মাছের আঁশই এখন অনেক উদ্যোক্তার স্বপ্ন পূরণ করছে। এমনই একজন উদ্যোক্তা কুমিল্লা নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডের সংরাইশ এলাকার গোমতী নদীর পাড়ের বাসিন্দা মাহবুব। যিনি মাছের আঁশ বিক্রি করেই ঘুরিয়েছেন নিজের ভাগ্যেরচাকা। বর্তমানে পরিত্যক্ত মাছের আঁশ রপ্তানি হচ্ছে চীন, সিঙ্গাপুর, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে। যার মাধ্যমে আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। মাহবুব কুমিল্লা নগরীর রাজাগঞ্জ, টমছমব্রিজ, পদুয়ার বাজার, ক্যান্টনমেন্টসহ বিভিন্ন বাজার থেকে ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ সংগ্রহ করে ধুয়ে পরিষ্কার করে ত্রিপলে দিয়ে রোদে শুকানোর পর প্যাকেটিং করে ৭০ টাকা কেজি দরে সেগুলো বিক্রি করেন। এই মাছের আঁশ প্রথমে ঢাকায়, তারপর সেগুলো রপ্তানি করা হয় সিঙ্গাপুর এবং চীনে। তবে পরিত্যক্ত এসব মাছের আঁশে সমৃদ্ধ বাজার জাপান হলেও বাংলাদেশ থেকে জাপানে সরাসরি রপ্তানির ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন মাহবুব।
পরিত্যক্ত এসব মাছের আঁশ লিপস্টিকসহ উন্নতমানের প্রসাধনসামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট, ক্যাপসুলের ক্যাপ, বৈদ্যুতিক বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে চীন, সিঙ্গাপুর এবং জাপানে মাছের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কুমিল্লার গোমতী নদীর পাড়ের ঝাকুনিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর ত্রিপল বিছিয়ে বিভিন্ন বাজার থেকে সংগ্রহ করে মাছের আঁশ ধুয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে। এ কাজে নিয়োজিত আছেন ৬ জন শ্রমিক। মাসে প্রতিজনকে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেন মাহবুব। শ্রমিকদের বেতন এবং অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছেন মাহবুব।
জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন মাহবুব। কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ, চকবাজার, রানীর বাজার, টমছমব্রিজ, বাদশা মিয়ার বাজার, পদুয়া বাজার, চৌয়ারা বাজার, ক্যান্টনমেন্ট বাজারসহ বিভিন্ন বাজার থেকে সংগ্রহ করছেন মাছের আঁশ। পরে সেগুলোকে প্রক্রিয়াকরণ করে ঢাকায় বিক্রি করেন।
মাহবুব বলেন, একটা সময় অনেকেই অনেক কথা বললেও দমে যাইনি। কটু কথা আর নানা তিরস্কার শুনেও আমি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অটুট ছিলাম। ধীরে ধীরে দিন যত গড়িয়েছে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছেছি। এখন ব্যবসায় ভালো সময় যাচ্ছে। কেউ এখন আর আমাকে নিয়ে তিরস্কার করে না। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ কেজি মাছের আঁশ সংগ্রহ করি। ঢাকার পাইকাররা বাড়ি এসে প্রতি মাসে এই মাছের আঁশ নিয়ে যান। প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে মাসে গড়ে ৩ হাজার কেজি মাছের আঁশ বিক্রি হয় বলেও তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন বলেন, মাছের আঁশ শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। মাছের আঁশে তৈরি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রসাধনী, ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মাছের আঁশ। মাহবুবকে জেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি যেন সঠিকভাবে এ কাজটি করতে পারেন।