
দীর্ঘদিন নদীর নাব্য ধরে না রাখার কারণে এক সময়ের খরস্রোতা করতোয়া নদী প্রায় ভরাটের দ্বারপ্রান্তে। শুকনো মৌসুমে কিছু কিছু জায়গায় পানির দেখা মিললেও, অধিকাংশ নদী ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। পানিশূন্য নদীতে মাছ ধরতে না পেরে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার করতোয়া নদীপাড়ের জেলেরা পড়েছেন অতি সংকটে। নদীর এমন আচরণে অনেক জেলে পরিবার তাদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়।
জেলেপাড়ার ওহিদুল জেলে জানান, নদীতে তেমন মাছ নেই। জালে আর মাছ উঠে না। পরিবার নিয়ে জীবনযাপন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেকে আবার প্রস্তুতি নিয়েছেন পৈতৃক পেশা ছেড়ে দেবেন।
‘গত চার-পাঁচ মাস ধরে অন্যের বাড়িতে কূপ খুঁড়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। আগে জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। নদীর সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক; কিন্তু নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরে আর সংসার চালানো যাচ্ছে না’—বলেন হঠাৎপাড়ার জেলে আমিরুল।
হঠাৎপাড়ার আরেক জেলে ময়নুল বলেন, নদীতে মাছ নেই তাই নিরুপায় হয়ে ইজিবাইক চালাচ্ছি। এভাবে নদীতে মাছ না থাকলে হয়তো আর ওই পেশায় ফিরব না। জেলে ফরিদুল বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মাছ ধরার চেষ্টা করছি, কিন্তু ধরতে পারি না। একসময় নদনদীতে প্রচুর মাছ ছিল, খাল-বিল ছিল উন্মুক্ত, তাই জেলে পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল। তাদের ঘরে অভাব ছিল না।
করতোয়াপাড়ের ফুলহার গ্রামের মাহাবুব মণ্ডল বলেন, পৈতৃক পেশা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই কিন্তু নদনদীতে মাছ না থাকায় সংসার আর চলে না। নদনদীগুলো বছরের বেশিরভাগ সময় শুকনো থাকায় মাছের প্রজনন ঘটে না। যে কারণে আশানুরূপ মাছও পাওয়া যায় না। আমি অন্য পেশায় চলে যাব।
ঘোড়াঘাট উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর নাব্য সংকটের কারণে মাছের আভাসস্থল হুমকির মুখে পড়েছে। আর এতে করে জেলেরা নদীতে মাছ পাচ্ছেন না। তাই অনেক জেলে তাদের পেশা পরিবর্তন করছেন।